হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : শিশু ফারাবি (৫) ও মারিয়া (১০) অঝোরে কেঁদেই চলেছে বাবার জন্য। একই সাথে কাঁদছে তাদের মা শ্যামলী মাহাবুব (৩০)। স্বামী ক্যাপ্টেন মাহাবুবুর রহমান স্ত্রী শ্যামলীকে বলেছিলেন ভেনিজুয়েলা থেকে জাহাজ নিয়ে দেশে ফেরার পর বাড়ীতে আসবেন। সে হিসেবে সন্তানদের বিভিন্ন বায়না মেটানোর আশ্বাস দিয়ে শ্যামলী বলেছিলেন খুব অল্পদিনের মধ্যে তাদের বাবা বাড়ীতে আসবে। আর তিনি ফিরে আসলে তাদের সব বায়না পূরন করা হবে। অল্প দিনের মধ্যে তার আগমন ঘটবে এমন সংবাদে বাড়ীর সকলেই ছিলেন হাসিখুশী। সেই হাসি-খুশী ম্লান হয়ে গেছে।
ক্যাপ্টেন মাহাবুব নড়াইল সদর উপুজেলার পুরুলিয়া গ্রামের নুরুল হক মোল্যার ছেলে। তিনি বিগত ৫ বছর যাবত নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে জমি কিনে বাড়ি নির্মান করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে ক্যাপ্টেন মাহাবুবুর রহমানের বাসায় গিয়ে দেখা যায় বাড়ীর সকলেই চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। সকলের চোখে মুখে অজানা আতংকের ছাপ। মাহাবুবুর রহমানের স্ত্রী শ্যামলী জানান, ক্যাপ্টেন মাহাবুব এর দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি স্ত্রীকে একটি ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছেন, তার জাহাজ এর নীচে ইন্সপেকশনে যাওয়া ওই দেশীয় ডুবুরী দলের একজন দূর্ঘটনা বশত: মারা গেছেন এবং আরোও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাকে ওই দেশের পুলিশ কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি তাকে ওই দেশের এশটি থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপর তার নামে কেস ফাইল করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি সুস্থ ভাবে জীবন নিয়ে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে স্ত্রীকে এসএমএস-এ লিখেছেন তার মুক্তির জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে উচ্চতর আইনী সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ না নিলে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন ক্যাপ্টেন মাহাবুব। এ ঘঁনায় মাহাবুব এর স্বজনরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। মাহাবুব এর অবুঝ শিশু ছেলে ফারাবি (৫) ও শিশু কন্যা মারিয়া (১০) বাবার জন্য ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। কান্নাজাড়িত কণ্ঠে তাদের মা শ্যামলী শিশু সন্তানদের আকড়ে আহাজারী করছেন। ক্যাপ্টেন মাহাবুব এর ভাই, বোন ও স্বজনরা কোন কুল কিনারা খুজে পাচ্ছেন না। কিভাবে ভাইকে উদ্ধার করবেন ? তারা ক্যাপ্টেন মাহাবুবকে উদ্ধারে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ওে আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্ত্রী’র নিকট ক্যাপ্টেন মাহাবুবের পাঠানো ম্যাসেজটি তুলে ধরা হলো। “ আমি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান (BMA 40th), বর্তমানে Tucupita,CICPC Police custody (Puerto Ordaz,Guayana city,Venezuela) তে আছি। গত ১২ জানুয়ারি Meghna Prestige Ship নিয়ে Boca Grande anchorage,Venezuela তে IRON ORE load করার জন্য পৌছাই, কার্গো লোডিং শেষ হয় ২৯ তারিখ সকালে। Local authority “Anti Drug” Requirement মতে, বন্দর ত্যাগের পূর্বে জাহাজের Under water inspection বাধ্যতামূলক। যথারীতি ২৯ তারিখ দুপুর ১২:২০ সময়ে Anti Drug authority এবং ডুবুরি দল আসে।
ডুবুরিদলের ইনচার্জের সহিত আমার ও চীফ ইঞ্জিনিয়ারের মিটিং হয় মেসরুমে ১:০০-১:১০ সময়ে। কিন্তু ডুবুরি দলের ইনচার্জ ইংরেজিতে কথা বলতে না পারায় Boarding agent নিজে থেকেই Interpreter হিসাবে কাজ করে।
অমবহঃ এর ৎবয়ঁবংঃ মতে প্রথমে তাদের একটি ফর্ম সাইন করি পাশাপাশি এজেন্টকেও বলি জাহাজের ইঞ্জিনরুম পরিদর্শন শেষে পযবপশষরংঃ ্ ঢ়বৎসরঃ ভড়ৎস সাইন করতে হবে এবং পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের ঢ়বৎসরংংরড়হ নিয়ে টহফবৎ ধিঃবৎ রহংঢ়বপঃরড়হ শুরু করতে হবে। কিন্তু তারা কোনটি না করেই কাজটি শুরু করে দেয়। এমতাবস্থায় ঝযরঢ় ফৎধমমরহম শুরু করে দেয় যার দরুন ডিউটি অফিসার ইঞ্জিন ইউজ করে খুব অল্প সময়ের জন্য। পরবর্তীতে ১৩:২৫ ডুবুরিদলের ইনচার্জ ও এজেন্ট ব্রিজে এসে বলে তাদের একজন ডুবুরি আহত হয়েছে। তখনই আমি তাদেরকে বলি এত অল্প সময়ের মধ্যে (১:১০-১:২৫) ইঞ্জিনরুম ইন্সপেকশন ছাড়া,পযবপশষরংঃ ্ ঢ়বৎসরঃ ভড়ৎস ভরষষ ঁঢ় ছাড়া কিভাবে ঁহফবৎ ধিঃবৎ রহংঢ়বপঃরড়হ শুরু করলো? এরপর ৩০ তারিখ সকাল ১০:১৫ সময়ে পুলিশ আসে শীপে ওহাবংঃরমধঃরড়হ করার জন্য। কিন্তু তারা শুধুমাত্র ঝঢ়ধহরংয ভাষা পারায় আমি ংঃধঃবসবহঃ দিতে অস্বীকার জানাই পাশাপাশি ৎবয়ঁবংঃ করি চ্ও ৎবঢ়ৎবংবহঃধঃরাব আসার জন্য। কিন্তু সেটা না করে তারা বলেছিল ” ক্যাপ্টেন, সবই আনঅফিশিয়াল”। পরবর্তীতে বিকাল তিনটায় আমাকে জাহাজ থেকে থানায় নিয়ে যায়,বলেছিল ১-২ দিন থাকা লাগবে। আমি ৩০ তারিখ রাতে পৌছায় থানায়, আসার পর আমার বিরূদ্ধে কেস ফাইল করা হয় খুব জোরালোভাবে। গত কয়েকদিনে খুব মানবেতর জীবন পার করছি আমি। আগামীকাল (৪ তারিখ সকাল ৯ টায়) আমার ঐবধৎরহম আছে। আমার কোম্পানি ধষৎবধফু দু’জন ষধুিবৎ নিয়োগ দিয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন। তবে বাংলাদেশ সরকার এর সহযোগিতা একান্ত জরুরী”। এসএমএস এর শেষ ভাগে তিনি গধৎরঃরসব ংবপঃড়ৎ এর সকল শুভাকাংখীদের পরামর্শ ও দোয়া কামনা করেছেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য কামনা করেছেন।