হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইলের পানিপাড়া গ্রামে যেন পাখির মেলা বসেছে। প্রায় সারা বছরই পানিপাড়া ইকোপার্ক পাখির কলকালিতে মুখরিত থাকে। শাীতকাল আসলে এটা আরোও বেড়ে যায়। প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশ থেকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামের ‘কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরূনিমা ইকোপার্কে’ পাখি আসে। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীতের শুরু থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসতে শুরু করেছে। অতিথি পাখি আর দেশি পাখি মিলে নড়াইলের অরূনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব এখন পাখিদের রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
নড়াইলের জেলা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে ৬৫ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি পাখিদের এক নিজস্ব ভুবন। সারাবছর এখানে পাখির দেখা মেলে। তবে শীতের হাওয়া বইতেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসে অরূনিমায়।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে অরূণিনমা রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইলের নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামে মধুমতী নদী থেকে সামান্য দূরে পিচ ঢালাই রাস্তার পাশে ‘কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরূণিমা ইকো পার্কে’ প্রায় দেড় শত বিঘা জমিজুড়ে বিভিন্ন গাছের ডালে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির বাসস্থান। লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখির কলতান দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের মনের খোরাক মিটাচ্ছে।
একেবারে গ্রামীণ পরিবেশে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসায় ওই এলাকার কয়েক’শ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। দিনভর শোনা যায় পাখির ডানা ঝাপটানি। বিকেলে পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করে। এসময় ডানা ঝাপটানির শব্দ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নামতেই রিসোর্টের সকল গাছের উপর পাখি ভরে যায়। কোন গাছের পাতা ডাল দেখা যায় না। শুধু পাখি আর পাখি। রাত যত গভীর হয় পাখিদের আগমন তত বাড়তে থাকে। সারারাত পাখির কলতানে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। ভোর হলেই বেশির ভাগ পাখি উড়ে চলে যায়। আবার বিকেল হলে চলে আসে। রিসোর্টের এলাকাজুড়ে রয়েছে পাখিদের দখল। রিসোর্টে গেলে দেখা মিলবে বক, হাঁসপাখি, পানকৌড়ী, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, শালিখ, টিয়া, দোয়েল, ময়না, চড়ুইসহ নাম না জানা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির রাজত্ব। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পাখির প্রজনন ঘটছে। ডিম থেকে ফুটছে বাচ্চা। বর্তমানে দেশের একমাত্র এই কৃষি পর্যটন কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে পাখির অভয়ারণ্যে।
নয়নাভিরাম এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য পাখি প্রেমী ও বিনোদন প্রিয় মানুষ। ওই এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ থাকায়, পাখিরা নিরাপদেই সেখানে আশ্রয় নেয়। এ কারনে দিনের পর দিন পাখির আগমন বেড়েই চলেছে। পাখি সংরক্ষণে প্রায়ই এ রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের সভা সেমিনার হয়। সে কারনে এলাকার মানুষ বেশ সচেতন। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ আর বিনোদনের আধুনিক সব সুযোগ সুবিধায় সন্তুষ্ট ভ্রমণপিপাসুরা। দেশের একমাত্র অ্যাগ্রো-ইকো-রিভারাইন-স্পোর্টস পর্যটন কেন্দ্র হল ‘অরূনিমা’। এর পুরো নাম অরূনিমা রিসোর্ট গলফক্লাব। প্রায় সারা বছরই বিনোদন প্রিয় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে কৃষিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব এ পর্যটন কেন্দ্রটি। পাখি দেখতে আসা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস, শেখ আকিদুল ইসলাম সহ আরোও অনেকে বলেন, প্রতিবছরই তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাখিদের এই অভয়ারণ্য দেখার জন্য এখানে আসেন। মানসিক প্রশান্তির জন্য প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য বিশেষ করে এখানকার পাখিদের এই অবাধ বিচরণের কোনো বিকল্প নেই। এখানে শুধু পাখিই নয়, দেখা যায় নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি বৃক্ষ। এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম একটি প্রাকৃতিক লেক। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত বিনোদন প্রিয় মানুষ ও পর্যটক আসছেন অরূনিমা ইকোপার্কে। উপভোগ করছেন প্রকৃতিকে, আবার ফিরে চলে যাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসিক সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে সুইমিং পুল, এসি, নন-এসি ৪০টি কটেজ। এক রুমবিশিষ্ট ভাসমান কটেজ রয়েছে ৪টি।
এখানে আবাসিক বোটসহ প্রতিটি কটেজে খাবারের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের মাঝে রয়েছে দ্বীপ রেস্টুরেন্ট, চিত্রা কনভেনশন হল, এসএম সুলতান লাউঞ্জ, দ্বীপ কটেজেস এবং সরকার অনুমোদিত টিপসি বার। রেস্টুরেন্টে মেলে দেশি-বিদেশি খাবার। ফলের জুস, নিজস্ব খামারে উৎপাদিত সবজি ও মাছের ফ্রাইসহ আরও আছে বারবিকিউ। এখানে আছে ৪০০ জনের সেমিনার বা কন্ফারেন্সের ব্যবস্থা। রয়েছে বিশাল আবাসিক সুবিধা।
অরূনিমা রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবের ম্যানেজার মুনিব খন্দকার বলেন, অরূনিমা রিসোর্ট ও গলফ ক্লাব প্রকৃতি ভিত্তিক একটি রিসোর্ট। বছরে প্রায় ৮/৯ মাস দেশি ও পরিযায়ী পাখির মিলনস্থল এটা। এটা দেখতে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। এবারও শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই পাখি আসা শুরু হয়েছে। শীত যত বাড়বে পাখি তত বাড়বে।
এখানকার আরেক কর্মকর্তা রানা বলেন, পাখিদের নিরাপত্তা দেয়ার কারনে এখানে দিন দিন পাখির সমারোহ বাড়ছে। তবে এটা সংরক্ষণে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়। সরকারি ভাবে আরোও শক্তিশালী সাপোর্ট পেলে এ সম্পদ সংরক্ষণে আমাদের বেগ পেতে হবে না।
অরিূনিমা রিসোর্টের কর্মকর্তা বেল্টু বলেন, দেশে পাখিকে সংরক্ষণ করার জন্য আইন আছে। তবে যতদিন মানুষ সচেতন না হবে, ততদিন শুধু আইন দিয়ে বা বল প্রয়োগ করে পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব না।