হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল: নড়াইলে নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা তৈরির গ্রাম নামে খ্যাত রামসিদি গ্রামে যেন নৌকা তৈরির উৎসব চলছে। একই ভাবে নৌকা তৈরির কাজ চলছে জেলার কালিয়া উপজেলার বড়নাল ও গাজীরহাটসহ বিভিন্ন গ্রামে। নৌকা তৈরির ওইসব গ্রাম হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষায় খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। প্রায় প্রতিদিন কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সে কারনে এবার নৌকার চাহিদা একটু বেশি। বর্ষাকালে নড়াইলের নীচু এলাকার লোকজনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। বর্ষায় যখন চারদিকের রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। তখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা।
রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালিয়ার বড়নাল গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। ওই এলাকার কাঠের ব্যবসায়ী ফসিয়ার বলেন, বছরের ৯ মাস কাঠের ব্যাবসা করি। বাকি ৩ মাস কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি ও বিক্রির কাজ করি। বর্ষাকালে কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করলে বেশ লাভ হয়। বিগত ১০ বছর ধরে এ কাজ কওে আসছি।
একটা নৌকা ৬ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। ১২ ফিট থেকে ১৪৬ ফিট সাইজ নৌকা তৈরি করি। বেশির ভাগ নৌকা মেহগিনি কাঠ দিয়ে তৈরি করি। নড়াইল সদরের রামসিদি গ্রামের নৌকার কারিগররা জানান,তারা অল্প টাকায় স্বল্প আয়ের লোকজনের কাছে নৌকা বিক্রি করেন। বর্ষামৌসুমে নৌকা কিনে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে এবং মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে অনেকে জীবীকা নির্বাহ করেন। তারা অল্প টাকায় সিজিনাল নৌকা কেনেন। এসব নৌকা এক বছর ভালো ভাবে চলে। এরপর জ¦ালানি ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না। নিম্নমানের কম দামি কাঠ দিয়ে সরাসরি পাতাম জোড়া দিয়ে খুব কম সময়ে এসব নৌকা তৈরি করা হয়। এতে একটি নৌকা তৈরিতে অল্প টাকা খরচ হয়। বিধায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষ কম টাকায় নৌকা কিনে জীবীকা নির্বাহ এবং চলাচল করতে পারে। এসব নৌকা ৪ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
নড়াইল সদর উপজেলার পেড়লী গ্রামের এনামুল হাসান সাচ্চু বলেন, বর্ষাকালে রামসিদি নৌকার উপর নির্ভর করে অনেকেই জীবীকা নির্বাহ করেন। তবে ওই নৌকার আয়ু খুব কম। বেশি দিন টেকে না। অল্পদিনের মধ্যে ওই নৌকা ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। ভাঙ্গা নৌকা জ¦ালানি ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না। একটু ভালো মানের হলে মানুষের ভোগান্তি কম হতো। গুয়াখোলা গ্রামের বিপুল সেন বলেন, বর্ষাকালে এ এলাকার মানুষের নৌকা ছাড়া উপায় থাকে না। মাঠের ফসল আনা নেয়া,মাছের ঘেরে যাতায়াত করা, অনেকের বাড়ি হতে রাস্তায় উঠার জন্য নৌকা একান্তই প্রয়োজন। আবার অনেকে এসব নৌকা ব্যবহার করে জীবীকা নির্বাহ করেন। স্বল্প আয়ের সানুষ কম দামের এসব নৌকা কিনে অন্তত: বিপদকালিন সময় পার করতে পারছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিশ^াস বলেন, বর্ষামৌসুমে নড়াইল জেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষক পরিবারের জীবন যাত্রা একটু পাল্টে যায়। বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণির লোকজন বেশ অসহায় হয়ে পড়ে। তারা পানিতে উৎপাদিত পণ্যের উপর নির্ভর হয়ে পড়ে। অধিকাংশই মাছ ধরে ও শাপলা তুলে জীবীকা নির্বাহ করেন। তাদের নিজেদের বাড়ি থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তায় উঠার জন্য নৌকা লাগে। অনেক পরিবার নৌকা নির্ভর হয়ে পড়ে। তাদের জন্য কমদামের এসব নৌকা খুবই সহায়ক। তবে টেকসই কম হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই তাদের নৌকা কিনতে হিমশিম খেতে হয়। তারপরও জীবন জীবীকার তাগিদে এসব নৌকা তাদের জন্য এক প্রকার আশির্বাদ স্বরূপ।