হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : আজ বুধবার। মহালয়া। হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া। মহালয়ার দিন হচ্ছে দুর্গা দেবীর আগমনী উৎসব। দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। এদিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু। সে হিসেবে পুজার বাকি আছে মাত্র এক সপ্তাহ।
আগমী ৯ অক্টোবর দেবীর বোধন ও ষষ্ঠীপুজা অনুষ্ঠিত হবে। বোধনের মধ্যদিয়ে চারদিনের শারদীয়া দুর্গাপুজা শুরু হবে। ১০ অক্টোবর সপ্তমী। আগামী ১১ অক্টোবর অষ্টমী পুজা অনুষ্ঠিত হবে। ১২ অক্টোবর একই দিনে নবমী ও দশমী পুূজা হবে। তাই প্রতিমায় শেষ তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। রং তুলির আঁচড়ে তাদের হাতে ফুটে উঠছে প্রতিমার অবয়ব তথা মুখমন্ডল। অধিকাংশ শিল্পি উতোমধ্যেূ কাজ শেষ করেছেন। আবার কেউবা শেষ পর্যায়ে। শেষ পর্যায়ে এসে কেউ আঁকছেন চুল। কেউ চোখের পাতা। কেউবা তুলির নিপুণ ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলছেন চোখ। দিন-রাত পালা করে চলছে এ কাজ। দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রতিটি মন্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। পাশাপাশি মন্ডপগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে একই সাথে।
নড়াইল জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট পংকজ বিহারী ঘোষ অন্ন জানান, এ বছর জেলার ৩ উপজেলায় ৫৬২টি মন্ডপে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলায় ২৪৪টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হবে। কালিয়া উপজেলায় ১৬৭টি মন্ডপে এবং লোহাগড়া উপজেলায় ১৫১টি মন্ডপে দুূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুজা উদযাপনের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন বলেন, এবার নড়াইল জেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বির্দে পুজা শান্তিপূর্ণ ভাবে করার লক্ষ্যে জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা জেলার প্রতিটি পুজা মন্ডবে আইন শৃংখলা বাহিনীর মত কাজ করবে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছে, তারা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। জেলার প্রতিটি মন্দিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
জেলার অন্যতম হিন্দু ধর্মীয় নেতা সবেশর্^র গোস্বামী বলেন এবার সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা পুজার নিরাপত্তায় কাজ করবেন। তাই মন্ডপের নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। এবার দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ উৎসবে হিন্দু সম্পদায়ের সাথে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশ নিয়ে উৎসব মুখর করে তুলবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর বলেন, ‘এ বছর মন্ডপগুলোতে পুজার আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। পুজার পরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি মন্ডপে নারী-পুরুষ আনসার সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সেনাসদস্য, র্যাব, পুলিশের টহল থাকবে। গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে জেলার সর্বত্র। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর থাকবে। শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ করার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপের জন্য ৫শ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ বিঘ্ন সৃষ্টি কিংবা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। দুর্গাপুজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।