জন্মভূমি ডেস্ক : নতুন বছরের শুরুতেই সরকারের সামনে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। বিদায়ী সরকারের আমলে অর্থনীতি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে নতুন সরকারের জন্য তা থেকে উত্তরণে দ্রুত ফলপ্রসূ কোনো সমাধান বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কর্মসংস্থানের সংকট এবং সরকারের ব্যয়ের ভার—এসব সমাধান করতে হবে আগামী বছর। যদিও দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, এবং চেষ্টা করছে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার। তবে পরিস্থিতি এতটা নাজুক যে এসব সংকট একসাথে সমাধান করা সহজ নয়। বরং এটি এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্রব্যমূল্য: গত বছর দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী—মূল্যস্ফীতি গড়ে ১০ শতাংশের বেশি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশাবাদী, আগামীতে এই সমস্যা কিছুটা কমবে। ব্যাংক খাত: দেশের ব্যাংক খাত কয়েক বছর ধরে ঋণ কেলেঙ্কারি এবং খেলাপি ঋণের জালে আটকে রয়েছে। বিশেষ করে, সরকারের সুবিধাভোগী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঋণ কেলেঙ্কারি এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে নানা পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তবে বাস্তবে ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি এখনও সেভাবে উন্নতি হয়নি। ফলে নতুন বছরে এই সংকট মোকাবেলা করা হবে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভ সংকট: দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময়। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ আরও বাড়াতে হবে। এর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও ডলারের দামবৃদ্ধি অব্যাহত আছে, যা দেশের বাজারে আবার নতুন চাপ সৃষ্টি করছে। নতুন বছরে সরকারের জন্য রিজার্ভ বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
উচ্চ সুদহার: সুদহার উচ্চ থাকার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক সতর্ক, যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগে কমতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে— গত বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪২ মিলিয়ন ডলার। ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। উন্নয়ন প্রকল্প: গেল বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প মাঝপথে থেমে গিয়েছিল। সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল, যা গত ১৫ অর্থবছরে কোনো একক সময়ের মধ্যে এত কম ছিল না। কৃচ্ছ্রতা সাধন এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার ফলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজস্ব আহরণ: এ বছর সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, তবে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা সরকারের জন্য চিন্তার বিষয়। আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ার আগে সরকারকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে, যা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ২০২৪ সালের বাজেটের লক্ষ্য ছিল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা, তবে বাস্তবে এটি ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আইএমএফ সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন বছরে সরকারের সামনে অর্থনীতি মেরামতের কঠিন চ্যালেঞ্জ
Leave a comment