সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : মহাসড়ক নয়, যেন ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদ। নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজার থেকে বেলতলা আমবাজার পর্যন্ত অংশজুড়ে যেন ভয়াল বিভীষিকা। খানাখন্দে পরিপূর্ণ এই সড়ক প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে জনজীবনের স্বাভাবিকতা। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। জলাবদ্ধতা, কর্দমাক্ত গর্ত, যানজট ও দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
স্থানীয় লোকজন জানান, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাগআঁচড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জিরো পয়েন্ট মোড়ে বড় বড় গর্তের কারণে বাজারে আসা মানুষ পড়ছেন চরম বিড়ম্বনায়। বর্ষায় এ গর্তগুলোয় জমে থাকা পানি ও কাদামাটি রাস্তার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন শহরের বুকে খনন করা পুকুর!
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের এই করুণ দশায় একটি মাঝারি বৃষ্টি হলেই রাস্তাজুড়ে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। বিশেষ করে সাতমাইল থেকে বেলতলা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কোথাও কোথাও পথচারীরা ঠিক করে বুঝতেও পারেন না, তারা হাঁটছেন গর্তে না সমতলে! দোকানপাটে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে, কেউ কেউ কাঁধে করে শিশু বা বই-খাতা বাঁচিয়ে রাস্তা পার হয়। জলাবদ্ধতায় মোটরসাইকেল, রিকশা ও ভ্যান প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে থাকে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই মনে হয় নদী বয়ে যাচ্ছে, মানুষ পড়ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে, আমাদের জীবনই যেন থেমে যায়।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার লাখো মানুষ চলাচলের একমাত্র ভরসা এই মহাসড়ক এখন যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী হাজারো শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ নিত্য ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
বাগআঁচড়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তিশা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় দুই কিমি পথ হেঁটে কলেজে যাই। আগে যেখানে ২০ মিনিটে পৌঁছাতাম, এখন সেখানে লাগে এক ঘণ্টা। ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারি না। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানো দুঃস্বপ্নের মতো। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দয়া করে এই সড়কের দিকে নজর দিন।’
একই কথা বললেন স্থানীয় ভ্যানচালক আয়ুব আলী মুন্সি। তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী বহন করি। গর্তে পড়ে ভ্যান উল্টে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। অথচ সড়ক বিভাগের কেউ নেই দেখার!’
বাগআঁচড়া বাজারের ওষুধ বিক্রেতা জিয়াউর রহমান জানান, বাজারের মূল স্থানে গর্তে জমে থাকা পানিতে গাড়িগুলো একে অপরকে ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট তৈরি করছে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে রীতিমতো পানিতে ডুবে যায় পথচারীরা। বহু মোটরসাইকেল উল্টে আহত হয়েছে। ভারী ট্রাকগুলো বিকল হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে বাজারের মাঝখানে।
স্থানীয় যুবক জয়নাল আবেদিন বলেন, সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত নিম্নমানের উপকরণ এবং সংস্কারের দীর্ঘসূত্রতা এ দুরবস্থার প্রধান কারণ। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো মেরামত করা হলেও তা এক বর্ষাতেই ধুয়েমুছে যায়। প্রতিবছর সাংবাদিকরা আসেন, ছবি তোলেন, নিউজ হয়। পরে সড়ক বিভাগ লোকদেখানো মেরামত করে। দুই-এক বস্তা বালি দিয়ে গর্ত ঢেকে চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মহাবুব খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,‘নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া অংশের উন্নয়নে আমরা কাজ শুরু করতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের বাজেট অনুমোদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলেই দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে। জনগণের দুর্ভোগ আমরা বুঝি এবং এটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক ব্যবহারে এলাকার মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন ভূমিকা রাখা জরুরি। অনেক সময় বাজার এলাকায় অপরিকল্পিত পার্কিং ও জলাবদ্ধতা রোধে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় অবহেলা।। আমরা চাই, স্থানীয়রাও সচেতন হোক,তাহলে রাস্তাটি টেকসই হবে এবং জনদুর্ভোগও কমবে।’