৩ বছরে ভাতা পেয়েছেন ৬৪৮০ জন
ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা পেয়েছে ৬৬১০ জন
হারুন-অর-রশীদ : খুলনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দারিদ্র বিমোচনে কৌশলপত্রের আলোকে নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে নানামূখি কাজ করছে।
সূত্র জানিয়েছেন, খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় ভিডব্লিউবি (সাবেক ভিজিডি) কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চলতি ২০২৩-২৪ চক্রে ২৩৯৪৩ জন উপকারভোগী নারীকে বিনামূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে খাদ্যশস্য প্রদান করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ চক্রে অক্টোবর’২০২৩ পর্যন্ত ৭১৮২.৯০০ মে.টন খাদ্যশস্য প্রদান করা হয়েছে। কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচিটি ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ নামে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় নগরীতে বসবাসকারী নারীদের মধ্য থেকে ১ম ও ২য় সন্তানের গর্ভধারী কর্মজীবী গরীব মা শুন্য থেকে ৩বছর বয়সী শিশুর যত্ন, পুষ্টি এবং মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে ৩ বছর মেয়াদে ভাতা প্রদান করা হয়। মাসিক ভাতার পরিমাণ ৮০০টাকা। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ৩১টি ওয়ার্ড থেকে প্রতি মাসে ওয়ার্ড প্রতি ৫ জন করে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫২৯ জন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৩ পর্যন্ত উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় গত ৩ বছরে ৩১টি ওয়ার্ডে ৫১লাখ ৮৪হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জি টু পি পদ্ধতিতে ভাতার টাকা স্ব-স্ব উপকারভোগীর মোবাইল হিসেব নম্বরে স্থানান্তরিত করা হয়। জীবিকায়নের জন্য নারীদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ৫টি ট্রেডে ৩ মাস মেয়াদে সার্টিফিকেট ইন বিউটিফিকেশন, ফুড প্রসেসিং এন্ড প্রিজারভেশন, হ্যান্ড এমব্রয়ডারী এন্ড কারচুপি ওয়ার্কস, ব্যাগ মেকিং এবং ব্লক-বাটিক এন্ড প্রিন্টিং এই ৫টি ট্রেডের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতি ট্রেডে ২০ জন করে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা প্রতি ব্যাচে ১০০ জন। বছরে ৪ ব্যাচে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতি কর্ম দিবসে উপস্থিতির জন্য ১০০ টাকা হারে প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে অনেক নারী আত্নকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।
সূত্র জানায়, খুলনার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন ৩০ জন। বছরে প্রতি উপজেলায় ১২০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গত ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬টি ব্যাচে ১৮০জন নারী মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮০ জন নারী কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ট্রেডে সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
খুলনার ৯উপজেলায় ৭০টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব রয়েছে। কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ২১০০ জন। এই ক্লাবে বাল্য বিবাহ বিরোধী, সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেল সুবিধা। কর্মজীবী মহিলা ও চাকুরী অনুসন্ধানকারী নারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে হোস্টেল সুবিধা প্রদান করা হয়। বেড রয়েছে ১৫০টি। বর্তমানে ৭০টি ব্যবহার যোগ্য। জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের খুঁজে বের করে তাদের কৃতিত্বের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যেক বছর দেশের সকল উপজেলা, পৌরসভা, জেলা, সিটি কর্পোরেশন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ৫ ক্যাটাগরিতে জয়িতা নির্বাচন ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে সম্ভাব্য জয়িতাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ ও প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কাজ চলমান রয়েছে।
খুলনার ৯উপজেলায় ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৬১০ জন উপকার ভোগীর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫ কোটি ৬১লাখ ১১হাজার ১৯৯ টাকা। কর্মজীবী নিম্নবিত্ত মায়েদের সস্তানদের জন্য রয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। এই কার্যক্রমের আওতায় জেলা কার্যালয়ে কর্মজীবী নিম্নবিত্ত মায়েদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হয়। সরকারি খরচে শিশুদের সর্ঠিক নিয়ম মোতাবেক সকালে উন্নত মানের নাস্তা, দুপুরে খাবার এবং বিকেলে খাবার দেয়া হয় খাবারের তালিকা দুধ, কলা, আপেল, আঙ্গুর, কমলাসহ মৌসুমী বিভিন্ন ফল রয়েছে। এখানে মনোরম পরিবেশে শিশুদের লেখাপড়া, বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের আসন সংখ্যা ৬০ জন। শিশুরা মাতৃস্নেহে খাওয়া, বিনোদন ও লেখা পড়া করছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বির্ভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিবস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস, বেগম রোকেয়া দিবস, আন্তর্জাতিক মা দিবস, জাতীয় কন্যা শিশু দিবস, বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর জন্ম দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন, আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন এবং বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস পালন।
খুলনা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসনা হেনা বলেন, সরকারের নিয়মনীতি অনুসরণ করে নারীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করা হচ্ছে। দরিদ্র স্বল্প শিক্ষিত নারীরা আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে নিজের ভাগ্য গড়ছেন। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুরা মা ছাড়া নিরাপদে থাকে।