ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা শুধু যে অনেক পুরনো তা-ই নয়। এই সম্পর্ক আবেগেরও। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি খেলার মাঠে আরেক ফ্রন্ট খুলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছে। দেশের ফুটবল অঙ্গন ঘিরে যখন নানা টানাপড়েন, তখনই মেয়েরা এনে দেন সাফল্য।
ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের অর্জন একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্সশিপ ২০১৭-তে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭-তে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
২০১৯ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ উইমেন্স কোয়ালিফায়ার্সে বাংলাদেশের মেয়েরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। ২০১৮ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। ২০১৯ সালে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অপরাজিত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন। ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন।
২০২২ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ। ২০২২ সালে দুটি ফিফা টায়ার ওয়ান আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলের সিরিজ জয়। ২০২২ সালে সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। এটা ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সবচেয়ে বড় অর্জন। বাংলাদেশের ফুটবল সংকটের জালে আটকে পড়েছে।
বাফুফের শোকেসে নারী ফুটবলারদের অর্জিত ট্রফি শোভা পাচ্ছে। দেশের ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে নারী ফুটবল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নারী ফুটবলের মুকুট যে জাতীয় নারী দলের মাথায়, সেই দলকে ফুটবল ফেডারেশন মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের বাছাই পর্বে অর্থের টানাপড়েনের দুর্বল নাটক সৃষ্টি করে পাঠায়নি। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সাধারণ মহলে দেশের ফুটবলের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
বাঙালি ফুটবলকে কখনো বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। দেখে আবেগ দিয়ে। নারী ফুটবলাররা অনেক পরিশ্রম আর সামাজিক বাধা-নিষেধের বিপক্ষে লড়াই করে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এখন একটি উচ্চতায় পৌঁছেছেন। ফুটবলকে ঘিরে তাঁদের স্বপ্ন যখন বড় হচ্ছে, তখন পর পর দুটি খবর আমাদের বিস্মিত করেছে। দেশের মেয়েদের আক্ষরিক অর্থে যিনি ফুটবল খেলা শিখিয়েছেন, নিয়ে এসেছেন আজকের অবস্থানে, সেই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন দল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ৩১ মে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। ‘এত মানসিক অশান্তি’ তিনি আর নিতে পারছেন না। তাই বাফুফে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ৩১ মে থেকে তিনি আর ফুটবল ফেডারেশনে নেই। একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না।
তাহলে কি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভাষায় বাফুফের মেয়ে ফুটবলে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে? তাল কেটে গেছে দলের ভেতর? কোচের সরে যাওয়ার ঘোষণা ও সিরাত জাহান স্বপ্নার অবসরের ঘোষণা কি তারই বহিঃপ্রকাশ?
এই সংকট কাটাতে হলে কারণ খুঁজে বের করতে হবে বলে আমরা মনে করি।