জন্মভূমি ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়সীমা ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামীর মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। বিএনপির সঙ্গে তার এক সময়ের মিত্র জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল কয়েক বছর ধরে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। এর জের ধরে দল দু’টির নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে রিপোর্টের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, এই প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিবাদে জড়ায় বিএনপি-জামায়াত। সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সে পরিস্থিতি আরও জোরালো হয়েছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন চায় না। অপরদিকে, জামায়াত আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে। জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সমর্থন করায় বিএনপির মধ্যে জামায়াত-বিরোধিতা আরও শক্ত আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই আগামী নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের প্রায় সবগুলোতেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, দল দুটির নেতারা এখন কোনো না কোনো বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই বিএনপি ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দাবি করে আসছে। আর জামায়াত দাবি করে আসছিল ‘সার্বিকভাবে সংস্কারের পরই নির্বাচন’। দলটি অবশ্য সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে এখন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলছে। তবে জামায়াত নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির থেকে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। জামায়াত বলেছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের যতটা সময় প্রয়োজন হবে, সেই সময় সরকারকে তারা দেবে। অন্যদিকে বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বলে বিএনপি সম্প্রতি এক বৈঠকের পর দাবি করেছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিট (ডব্লিউজিএস)-এর ইন্টারঅ্যাকটিভ প্ল্যানারি অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও একই সময়রেখার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে তাদের সমর্থনের কথা জানালে তা বিএনপিকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ করেছে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা বিএনপি যাতে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী না হতে পারে সেজন্যই জামায়াত ‘নির্বাচন প্রলম্বিত করতে’ নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে।
যদিও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বা বিরোধিতার কোনো ব্যাপার নেই। বরং বিএনপির মতো তারাও তাদের দলীয় কাজ করে চলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার এ বিরোধের মূল কারণ হলো নির্বাচন। বিএনপি ভাবছে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে বা তারা অন্য ধরনের কিছু করতে পারে। আবার জামায়াত মনে করছে সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সেটি জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয় কি না। এমন কিছু বিষয়েই দল দুটির চিন্তার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রশি টানাটানি

Leave a comment