
ক্রীড়া প্রতিবেদক : সালাউদ্দিন গংয়ের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার সাবেক তারকা ফুটবলাররা। পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। সবার কথা একটাই, ব্যার্থ কর্মকর্তাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। অনেক হয়েছে, এবার ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা সালাউদ্দিন-সালাম মুর্শেদিসহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) গদি আকড়ে থাকাদের। তবে দেশের সচেতন মানুষ যাই বলুক বা মনে করুক সালাউদ্দিন বাহিনীর চিন্তা-ভাবনা কি সেটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে তাদের বীরোচিত কথাবার্তায়। ফুটবল গোল্লায় যাক, তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাই তাদের মূল লক্ষ্য। দুর্নীতির দায়ে ফিফা বহিষ্কার করেছে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে। গুঞ্জন চলছে, ফিফা নিষেধাজ্ঞার তালিকা আরও বড় হতে পারে। ফেঁসে যেতে পারেন ফিফার নজরদারিতে থাকা বাফুফের অনেক রথী-মহারথী। বিষয়টা সময়সাপেক্ষ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
এদিকে সোহাগ-কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন বাফুফে বস। কেননা তদন্ত কমিটিতে নেই বাইরের কোনো লোক। নিজেরাই করবেন নিজেদের বিচার। যদিও কাজ শুরুর আগেই তদন্ত কমিটিতে শুরু হয়েছে পদত্যাগের হিড়িক। পদত্যাগ করেছেন কমিটিতে থাকা বাফুফের দুই সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন মহি ও আতাউর রহমান মানিক। কারণ তাদের দুজনেরই জানা বাফুফেতে কি ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এখানে তদন্ত করার কিছু নেই। বাংলাদেশের যে কোনো ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির প্রথম ও প্রধান কাজটা হয় প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া। বাফুফেতেও হয়ত এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর পাঁয়তার চলছিল। ফলে নিজেদের সমালোচনার বাইরে রাখতেই তদন্ত কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মহি ও মানিক। শোনা যাচ্ছে, দশ সদস্যের তদন্ত কমিটির আরও অনেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তাভাবনা করছেন। শোনা যাচ্ছে পদত্যাগের এই ধাক্কা লাগতে পারে খোদ নির্বাহী কমিটিতেও।
বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আরও বছরখানেক বাকি। তার আগেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন অনেকে, যারা ফুটবলকে ভালোবেসে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সালাউদ্দিনের এক যুগের রাজত্বে দেশের ফুটবলের কি উন্নতি হয়েছে তা সবারই জানা। ফলে মানসম্মান বাঁচাতে নতুন নির্বাচনের আগেই সালাউদ্দিনের সঙ্গ ত্যাগ করার চিন্তাভাবনা করছেন তারা।
জাতীয় বা বয়সভিত্তিক ফুটবল দলের প্রতিটি আসরে অংশগ্রহণের আগে ১৭টি আইটেম কিনতে গিয়ে প্রতিবারই ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এই জালিয়াতির কারণেই ফিফার ‘ঠাঠা’ পড়েছে বাফুফের ওপর। অর্থ আত্মসাৎ করা বাদ যায়নি নারী দলের মোজা থেকে শুরু করে জার্সি কেনার বেলাতেও। আর বিমানের টিকিট কেনা মানেই যেন কোটি টাকার হাতছানি। নিষিদ্ধ সোহাগ কেবল একাই এই দুর্নীতির মহোৎসব করেননি। তাকে সহায়তা করে ভাগ পেয়েছেন উপর-নিচের মহলের লোকজনও। দুর্নীতির গোমর ফাঁস হয়ে পড়ায়, ফিফার তদন্ত অব্যাহত থাকায় রাত দূরের কথা, দিনের স্বস্তির ঘুমও হারাম হয়ে গেছে বাফুফের অনেক কর্মকর্তার।
ঈদের ছুটিতে স্বস্তিতে ছিলেন না তারা। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে সহসা বাফুফের কয়েক স্টাফও নাকি হারাতে পারেন চাকরি। ফিফা থেকে সোহাগ নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন বাফুফের প্রতিটি কর্মকর্তাই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন আর তাদের কাউকেই বিশ্বাস করছে না দেশের ক্রীড়ামোদিরা। বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদি যতই আস্ফালন করে বলুন, সোহাগ দুর্নীতি করেনি, জালিয়াতি করেছে।