By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি
সাতক্ষীরা

পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি

Last updated: 2025/12/03 at 12:38 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 19 minutes ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতেই হবে। সে জন্য একটি শুভসূচনা প্রয়োজন। সেই সূচনা করার একটি উপযুক্ত সুযোগ ছিল ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখের নির্বাচন; কিন্তু সুযোগটির সদ্ব্যবহার হয়নি। আরেকটি সুযোগ ছিল জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচন; এটিও ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। আরেকটি সুযোগ হচ্ছে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন, যেটি এ বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে হওয়ার কথা। সুযোগটির সদ্বব্যবহার হবে কি হবে না, জানি না।
আগামী নির্বাচন যদি এমন সুন্দরভাবে করা যায় যে, সেটি পৃথিবীর সামনে একটি নজির হয়ে থাকে তাহলে আমরা মনে করব, আমাদের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এখনো নিশ্চিত নই যে, আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন আমাদের কামনা মোতাবেক সুন্দর হবে কি না; কিন্তু সুন্দর হোক এটা কামনা করতে দোষ নেই। গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করতে পার্লামেন্টে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ, পার্লামেন্ট সদস্যদের কণ্ঠ অত্যন্ত জোরালো ও তাৎপর্যবাহী। পার্লামেন্টের বাইরের শক্তি এখনো এত শক্তিশালী হয়নি যে, পার্লামেন্টের শক্তিকে ছাড়িয়ে যাবে। তাই গুণগত পরিবর্তন তথা সংস্কার ঘরের ভেতরে ঢুকেই করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন, উপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে যাওয়া। আমাদের দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল হলেও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আমরা জোটের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এবং গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। ২০১৪ সালের জানুয়ারির পরিস্থিতি এবং ২০১৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের পরিস্থিতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য তফাত আছে। যা হোক, যে উপলক্ষগুলোর মাধ্যমে পরিবর্তনের কথা বলছি, সেই পরিবর্তনে অনেক ছোট ছোট উপাত্ত থাকবে। এর কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করছি।
এক: রাজনীতিবিদদের ভাষায় শালীনতা ও শোভনতা থাকতে হবে। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের মুখের কথা, বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন ইত্যাদি হওয়া উচিত তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। মিডিয়াতে যেহেতু বিবিধ পেশাজীবীর বা বিভিন্ন বয়সের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির কথাবার্তা দর্শনীয় হয় বা শোনা যায়, সেহেতু যেসব মানুষই মিডিয়াসম্পৃক্ত এবং তাদের প্রত্যেকের ভাষায় শালীনতা ও শোভনীয়তা প্রয়োজন।
দুই: জিদ ও গোঁয়ার্তুমি পরিহার করা উচিত। এ মুহূর্তে সরকারি বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শিবির বলছে, বিদ্যমান সংবিধান মোতাবেক, বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু সংবিধান সংশোধিত হয়েছে, সেহেতু ক্ষমতাসীন দলের মতে, নির্বাচনের জন্য তত্তাবধায়ক সরকার গঠন করার আর কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরোধী শিবির (যেখানে আমাদের দলও একটি শরিক) বলছে, একাধিক কারণেই ক্ষমতাসীন দলের এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সরকার ও দেশ পরিচালনা অব্যাহত রেখে ওই পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নিরপেক্ষ ফলাফল আশা করা অবাস্তব। এখন প্রশ্ন দাঁড়াল, কী নিয়মে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরোধী শিবিরকে আশ্বস্ত করা যায়, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। অপর ভাষায় বলা যায়, আমি এবং আমরা যারা বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরে আছি, আমরা কী নিয়মে আশ্বস্ত হবো, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু আর নিরপেক্ষ হবে?
অন্য কথায় বলতে গেলে এই দাঁড়ায়, যেহেতু নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতি এখন বাতিল, তাহলে সরকারি নিরপেক্ষতার পদ্ধতি কী হতে পারে; অথবা অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কি না, যার মাধ্যমে বর্তমান সরকারি দল এবং বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরোধী শিবির উভয়ে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে মানসিক স্বস্তি নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। এরূপ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে গেলে অবশ্যই গবেষণা ও আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা প্রয়োজন এই মর্মে যে, মানসিক স্বস্তি নিয়ে যদি রাজনৈতিক অঙ্গনের কোনো একটি অংশ, নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তাহলে পরিণতিতে কী হতে পারে?
তিন: আমাদের রাজনীতিকে বর্তমানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, ভবিষ্যতের দিকে প্রসারিত করতে হবে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এ তিন কালের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। উন্নত বিশ্বের প্রবণতা বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে নজর বেশি দেয়া। আমাদের মধ্যে যারা প্রবীণ, তাদের অনেকেরই মনে একটি ধারণা হলো, তারা (প্রবীণেরা) যা মনে করেন, দেশের সব মানুষই যেন তাই মনে করেন। আসলে দেশের তরুণ সম্প্রদায় বহুলাংশেই প্রবীণ সম্প্রদায় সম্পর্কে আস্থাহীনতায় ভুগছে। ইতিহাস সম্বন্ধে যতটাই আমরা তরুণদের ‘খাওয়াতে’ চাই, তারা ততটুকু খেতে প্রস্তুত নয়। তরুণেরা ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিদের সাথে দেশে থাকা বাংলাদেশিদের ইন্টার-অ্যাকশন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বা তরঙ্গ জগতে কোনো সীমারেখা নেই; যার কারণে বাংলাদেশি তরুণ সম্প্রদায় বিশ্বের অন্য দেশের ও সমাজের তরুণ সম্প্রদায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হতে চায় এবং এ জন্য সুযোগ চায়। অতএব, আমাদের রাজনীতি আগামী দিনের বাংলাদেশের মালিক তথা বর্তমানের তরুণ সম্প্রদায়ের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাক্সক্ষা একোমোডেইট করতে হবে বা এটাকে আশ্রয় দিতে হবে।
চার: ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’ বলতে বোঝাতে চাই যে, বিভিন্ন পেশার মেধাবী, সাহসী কর্মঠ, দক্ষ ও আগ্রহী ব্যক্তিরা যেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। ভূগোল থেকে একটি উদাহরণ দিই। ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা নদীর পানি এত দূষিত যে, শুষ্ক মওসুমে (অক্টোবর থেকে মে) এই নদীর পানিকে ‘পানি’ বলা মুশকিল হয়ে যায়। এটাকে শুধু তরল পদার্থ বললেই চলে। অপর দিকে, বর্ষাকালে যখন বৃষ্টি হয়, এটাকে বুড়িগঙ্গার তরল পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দূষিত তরল পদার্থের তুলনায় যখন স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি নদীতে বৃদ্ধি পায়, তখন বুড়িগঙ্গার ‘পানি’কে আবার পানির মতো মনে হয়। অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার দূষিত তরল পদার্থকে হালকা করতে হলে বাইরের পানি দরকার। তদ্উপ, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রবাহে, যদি উন্নত জীবন দান করতে হয়, তাহলে নতুন মানুষ, নতুন চিন্তা, নতুন মেধার প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ রাজনীতি নামক কর্মকাÐকে সম্মানজনক করতে হবে। তাহলেই মানুষ রাজনীতি করতে আগ্রহী। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করার পর বড় হলে রাজনীতি করবে- এ কথা যেমন সত্য ও ভালো, তেমনই সত্য ও ভালো যারা ছাত্রজীবনে যারা রাজনীতি করেনি, তবে পরবর্তী জীবনে জড়িত হতে চায়; তাদের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত রাখতে হবে।
কিছু ধারণা স্থিতি লাভ করেছে আমার মনে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য যে চেষ্টা সবাই করছেন বা আমরাও করছি এবং ভবিষ্যতেও করব, সেগুলো অবশ্যই আমার মনের ভেতরে থাকা, স্থিতিশীল ধারণাগুলোর সাথে সম্পূরক ভূমিকা রাখবে। একটি একটি করে সেই স্থিতিশীল ধারণাগুলো উল্লেখ করছি।
এক: বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগতভাবে সেই রণাঙ্গনের একজন যোদ্ধা। অতএব, আমৃত্যু আমার প্রত্যয় থাকবে, এ দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা এবং দেশকে নিরাপদ রাখা।
দুই: এক নম্বর ধারণার ধারাবাহিকতায় বলেছি, অবদান রাখার জন্য এবং নিরাপদ রাখার জন্য, সুযোগ পেতে হবে বা সুযোগ করে নিতে হবে এবং এ কাজগুলো করতে হলে যে বৈরিতা সামনে আসে, সেটিকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিন: বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। ১৯৭২ সালে যেমন ছিল, কিংবা ১৯৮২ সালে যেমন ছিল, ১৯৯২ সালে যেমন ছিল ও ২০০২ সালে যেমন ছিল, এখনো তেমনই সম্ভাবনাময় দেশ। ধাপে ধাপে সময় সময় ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন ভিন্ন নেতৃত্বে সম্ভাবনা পূরণের একেকটা ধাপ বাংলাদেশ পার হয়ে এসেছে। আবার সম্ভাবনার নতুন ধাপের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বিভিন্ন কালে ঐতিহাসিক যেসব নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সম্ভাবনার ধাপগুলো অতিক্রম করেছে, আমরা তাদের সব সময় স্মরণ করব, স্যালুট দেবো।
চার: বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও প্রতিশোধস্পৃহা পরিহার করা অপরিহার্য। কিন্তু এ কথা বলা সহজ- এই মর্মে কোটি কোটি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা কঠিন বৈকি!
পাঁচ: ধাপে ধাপে সময় সময় উন্নয়নের সাথে সাথে আমরা অনেক বড় ভুলও করেছি। তার মধ্যে অন্যতম বড় ভুল হলো, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে ফেলা। তাই বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ছয়: গ্লোবালাইজেশন বলি বা বিশ্বায়ন বলি, যে নামেই ডাকি না কেন- যোগাযোগের যুগে (ইংরেজিতে: ‘ইন দ্য এইজ অব ইনস্ট্যান্ট কমিউনিকেশন’), প্রতিবেশিত্ব বা সহাবস্থান- এরূপ শব্দগুলোর তাৎপর্য ভিন্নমাত্রা অর্জন করেছে। পৃথিবীর কোনো দেশই তাদের প্রতিবেশীর বৈরিতার মুখে স্বস্তিতে থাকতে পারে না। তাই স্বকীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি প্রতিবেশীর স্বকীয়তা ও নিরাপত্তার দিকে নিজেরা যেমন মনোযোগী থাকব, তেমনি প্রতিবেশীও যেন আমাদের স্বকীয়তা ও নিরাপত্তাকে সম্মান করে, এ জন্য ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে।
সাত: ধর্মীয় বা কৃষ্টিগত বা ভাষাগত সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু উভয় ধরনের মানুষ দিয়ে একটি দেশ ও জাতি- বাংলাদেশ এই গঠনের বাইরে নয়। আমার ধারণা, সংখ্যাগুরুদের ওপর অলঙ্ঘনীয় দায়িত্ব হয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান এবং জাতীয় অগ্রগতিতে সহযাত্রী করা।
একনাগাড়ে ২২ বছর মালয়েশিয়ার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ডাক্তার মাহাথির মোহাম্মদ, তিনি আত্মজীবনী লিখেছেন। মাহাথিরের লেখা দীর্ঘ বইটির নাম ‘অ্যা ডক্টর ইন দ্য হাউজ’। বাংলা অনুবাদ করলে এরকম দাঁড়ায়, ‘বাড়িতে একজন চিকিৎসক’। তরুণ বয়সে আইনজীবী হতে চাইলেও, পরিস্থিতির কারণে মাহাথির চিকিৎসক হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে তিনি শুধু রোগী দেখেননি, চিকিৎসকের অভিজ্ঞতায় রাজনীতিকেও দেখেছেন। নিজের লেখা বইয়ের মধ্যেই মাহাথির ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, পঞ্চাশ-ষাট বা সত্তরের দশকেও মালয়েশিয়া নামক দেশ ও সমাজকে একটি রোগী বিবেচনা করলে, তার চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল। ওই ডাক্তার রাজনৈতিক ডাক্তার। মাহাথির মোহাম্মদ নামক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওই রাজনৈতিক ডাক্তারের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই তিনি তার আত্মজীবনীর নাম দিয়েছেন ‘বাড়িতে একজন চিকিৎসক’। ইংরেজিতে বইটা অনেক দীর্ঘ; যাদের পক্ষে পড়া সম্ভব, তারা যেন এটা পড়েন সেই অনুরোধ রাখছি। এই অনুরোধ রাখার পেছনে একটি কারণ আছে। দুই চার-পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় এবং টকশোগুলোতে একটি বিষয় বহুলালোচিত ছিল। বিষয়টি ছিল, অর্থনৈতিক উন্নতি আগে, নাকি গণতান্ত্রিক উন্নতি আগে? বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিরা এই মর্মে সোচ্চার ছিলেন এবং এখন কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করছেন যে, গণতন্ত্র যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গতি ও স্বচ্ছতা যদি একটু কমেও যায় তাতে কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের এরূপ ব্যক্তিরা প্রায়ই সিঙ্গাপুর বা কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার উদাহরণ টানেন। এ জন্যই এই কলামের পাঠকদের মধ্যে যারা অধিকতর সচেতন তাদের কাছে অনুরোধ, যেন তারা মাহাথিরের আত্মজীবনী পড়েন। তাহলে তারা নিজেরাই পূর্ণ ধারণা পাবেন, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে কী মিল আছে এবং কী মিল নেই। তারা এই ধারণাও পাবেন, মালয়েশিয়ার সাবেক নেতা ডাক্তার মাহাথির মোহাম্মদ ও তার পরিবার এবং বাংলাদেশের বর্তমান নেতা ও তার পরিবারের বৈশিষ্ট্য এবং কর্মকান্ডের মধ্যে কী মিল আছে এবং কী মিল নেই। একই সাথে পাঠক এটাও অনুভব করবেন, মাহাথির বা লি কুয়ান ইউ বা নেলসন ম্যান্ডেলা বা ইয়াসির আরাফাত বা রজব তৈয়ব এরদোগান, তাদের নিজ নিজ দেশের মাটি ও মানুষের মধ্য থেকেই উঠে এসেছেন। বাংলাদেশেও যদি কোনো ব্যতিক্রমী নেতা আবার উঠে আসতে হয়, তাকে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ থেকেই উঠে আসতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের মাহাথির বা বাংলাদেশের ম্যান্ডেলা লুক্কায়িত আছেন, শুধু আবিষ্কারের অপেক্ষা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অসুস্থতার নিরাময় করার জন্যও চিকিৎসক জরুরি। বাংলাদেশ কি রাজনৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে অসুস্থ? আমার মতে, অসুস্থ না বললেও পুরোপুরি সুস্থ নয়। সুস্থতায় ঘাটতি কতটুকু অথবা কতটুকু অসুস্থ, তার উত্তর একেকজন চিন্তাশীল ব্যক্তি বা বিশ্লেষক একেক নিয়মে দেবেন। উত্তরটি পাঁচ পৃষ্ঠার রচনা থেকে নিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠার বই করেও দেয়া যাবে। পাঁচ পৃষ্ঠার থেকেও ছোট হলো একটি কলাম। এরকম একটি কলাম লিখেছিলেন একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। তিনি জনপ্রিয় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। তার অনেক লেখা থেকে আমি বক্তব্য উদ্ধৃত করতে পারতাম। কিন্তু স্থানাভাবে সব জায়গা থেকে না নিয়ে একটি জায়গা থেকে তার বক্তব্য ধার করে এখানে উদ্ধৃত করছি। ২৫ নভেম্বর ২০১৪, তিনি যে কলামটি লিখেছিলেন, সেই কলাম থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মতো কঠিন এবং রাজনীতির মতো দুর্বোধ্য বিষয় মোকাবেলা করেও অনেক ছোটখাটো বিষয়ের সমস্যা সমাধানেও যখন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় তখন নেতৃত্বের সঙ্কট উন্মোচিত হয়। দেশে দলীয়করণের প্রতিযোগিতা, প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা ও সম্মানের জায়গা সরিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই। ছাত্র রাজনীতি মেধাবী সৃজনশীল ছাত্রদের কাছ থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে, ছাত্র সমাজের আস্থা হারিয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ স্বীকৃত হয়েছে। দুর্নীতি দিনে দিনে বহু বেড়েছে। রাজনীতিতে সহনশীলতার উল্টো পথে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে প্রতিহিংসা। গুম, খুন মানুষের জীবনকে নিরাপত্তাহীন করেছে। ইয়াবাসহ মাদকের আগ্রাসন একেকটি পরিবারকেই নয়, দেশের একটি প্রজন্মকে অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সম্পদ সীমিত, জনসংখ্যা বাড়ছে। শিল্প, কলকারখানা থেকে ব্যবসায়বাণিজ্যে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, কর্মসংস্থানের খবর নেই। উন্নয়ন চলছে, দুর্নীতি থেমে নেই। রাজনীতিতে চলছে ভোগ-বিলাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তদবির বাণিজ্য সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। মানুষের লোভ-লালসা এতটাই তীব্র যে, রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বাজিকরদের আস্ফালন চলছে। গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন যেমন চলছে, তেমনই আন্দোলনের নামে দেখা দেয় মানুষ হত্যা আর জানমালের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। সাংবিধানিকভাবে জনগণ ক্ষমতার মালিক হলেও রাজনৈতিক শক্তির কাছে মানুষের অধিকার ও সম্মানবোধ দিন দিন পদদলিত হচ্ছে…।’ কলামটি প্রকাশিত হওয়ার ছয় বছর পরও কথাগুলো হুবহু প্রযোজ্য। এরূপ পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের অশুভ পৃষ্ঠপোষকতায় এটা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক সরকার এইরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এককভাবে দায়ী না হলেও অবশ্যই বৃহদাংশের জন্য দায়ী। তাই এইরূপ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণও এক দিনে পাওয়া যাবে না এবং নিশ্চিতভাবেই ধরে নেয়া যায়, বর্তমান সরকারের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
পরিত্রাণ পেতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যেকোনো কাজ করতে গেলে শুধু শ্রম দিয়ে হয় না। মেধা, শ্রম, সময় এবং অর্থ এসব কিছুর সমন্বিত বিনিয়োগেই একটা ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সবকিছুর আগে প্রয়োজন একটি সিদ্ধান্ত। ইতিহাসের একেক জন মহানায়ক, তার পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে এক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সিদ্ধান্তগুলো যুগান্তকারী ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ কালো মানুষের মুক্তিদূত নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী থেকে, উত্তর ভিয়েতনামের সংগ্রামী রাষ্ট্রনায়ক হো চি মিনের জীবনী থেকে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবনী থেকে অনেক উদাহরণ আমরা টানতে পারি। আগামী দিনের গবেষকরা । বর্তমানে যা বাংলাদেশ, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সেটিই ছিল ‘পূর্বপাকিস্তান’। ৯ মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্বকেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তারা নিকটতম প্রতিবেশী, একটু দূরের প্রতিবেশী, অনেক দূরের প্রতিবেশী এরূপ রাষ্ট্রগুলোর সাথে কী রকম সম্পর্ক রাখবেন এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা কী রকম হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক বছরগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো, পরবর্তী দশকগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করেছিল এবং এখনো মাঝে মধ্যে করে। বর্তমান রাজনৈতিক সরকার বলছে, তারা বাংলাদেশকে অগ্রগতি ও উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে। দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন কর্মকন্ডে আছে। কিন্তু সরকার যে কথাগুলো জনগণকে স্বচ্ছভাবে বলছে না, সেটি হচ্ছে, আপাতত দৃশ্যমান উন্নয়নের বিনিময় মূল্য কী? অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কতটুকু মূল্য বা কতটুকু ছাড় দিয়ে বা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে আমরা উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছি?
আমাদের দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে উন্নতি অবশ্যই অনেক হয়েছে, কিন্তু আমাদেরই মতো পরিস্থিতিতে থাকা অন্যান্য দেশের তুলনায় সেটি কম। অন্যভাবে বলা যায়, যতটুকু উন্নতি করতে পারতাম, ততটুকু হয়নি। আমাদের সাফল্য যা কিছু আছে তার জন্য কৃতিত্ব যেমন আমাদের, তেমনই ব্যর্থতাগুলোর জন্য দায়ও আমাদের। এরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। অতীতের ভুল সংশোধন প্রয়োজন। একটি দেশ যেহেতু রাজনীতিবিদরা পরিচালনা করেন, তাই রাজনীতিতেই চিকিৎসা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুণগত পরিবর্তন দরকার। বিদ্যমান বহুদলীয় রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্য থেকেই এই গুণগত পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা চাই সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, মেধাবী ব্যক্তিরা রাজনীতিতে জড়িত হোন। আমরা চাই সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, মেধাবী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জনগণের খেদমতের সুযোগ পান। আমরা চাই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এমন হোক যেখানে সৎ, সাহসী, মেধাবী, শিক্ষিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন, জনগণের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে পারেন। যথেষ্ট বা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, মেধাবী ব্যক্তি যদি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে একটি গুণগত পরিবর্তন সূচিত হবেই। সে জন্য বাংলাদেশে সাহসী ভোটার প্রয়োজন, যে ভোটাররা সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, মেধাবী ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সে জন্য বাংলাদেশে সাহসী মিডিয়া প্রয়োজন, যে মিডিয়া সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, মেধাবী ব্যক্তিদেরকে উৎসাহিত এবং প্রচারণায় পৃষ্ঠপোষকতা করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাক্সিক্ষত গুণগত পরিবর্তনের আরো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: প্রথম- মুক্তিযুদ্ধের আদি ও অকৃত্রিম চেতনা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চেতনা সম্মিলিতভাবে বা যুগপৎ বিদ্যমান থাকবে। দ্বিতীয়- ধর্মীয় নেতারা, মুক্তিযুদ্ধের নেতারা এবং জাতীয় নেতারা, জাতীয় ঐক্যের প্রেরণা হবেন, জাতীয় বিভক্তির কারণ হবেন না। তৃতীয়- সমাজে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। চতুর্থ- জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস শুরু হবে। পঞ্চম- প্রতিহিংসা নয়, পারস্পরিক প্রতিযোগিতাই হবে উন্নয়নের এবং অবদানের কাঠামো। ষষ্ঠ- আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, সততা এবং প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সপ্তম- রাজনীতি ও ব্যবসাতে তারুণ্যকে তথা বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে উৎসাহিত করতে হবে ও অগ্রাধিকার দিতে হবে। অষ্টম এবং শেষ: বাংলাদেশের মঙ্গল ও কল্যাণ, বাংলাদেশের নাগরিকদের উপকার কোন কোন পন্থায় এবং কিসে কিসে নিহিত এই প্রসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি চালু করতে হবে।
এই মুহূর্তে চারটি রাজনৈতিক সংগ্রাম চলমান। প্রথম সংগ্রামটি হচ্ছে: ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালিত সংগ্রাম, যেন তারা ক্ষমতায় নিজেদের অবস্থান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে পারে। দ্বিতীয় সংগ্রাম যেটি সহজে অনুভব করা যায় এবং যে সংগ্রামটিতে আপাত দৃষ্টিতে বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী বা জনগোষ্ঠীর অংশ জড়িত, সেই সংগ্রামটি হচ্ছে: সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করার জন্য তথা সর্বদলীয় অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধানে পার্লামেন্ট নির্বাচন করার জন্য শাসনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করার সংগ্রাম। তৃতীয় সংগ্রামটি সহজে দেখা যাচ্ছে না বা অনুভূত হচ্ছে না এবং সংগ্রামীদের কাফেলার জনসংখ্যাও কম; সেই তৃতীয় সংগ্রামটি হচ্ছে- বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য সংগ্রাম। চতুর্থ সংগ্রামটি হচ্ছে: বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য দুর্বল সংগ্রামী কাফেলাকে শক্তিশালী করার সংগ্রাম। এই কাফেলার নেতৃত্ব দিতে সৎ, সাহসী, শিক্ষিত ও মেধাবী মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন ওঠে, রাজনীতি কি আদৌ একটি পেশা হতে পারে? প্রশ্নটি সঙ্গত। কারণ, যখন আমরা রাজনীতি শব্দটির সাথে পরিচিত হই, তখন মনে হয়, এটি শুধু জনগণের সেবা, আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমের বিষয়। কিন্তু দিন দিন রাজনীতি একটি পেশা হিসেবে রূপ নিতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন কীভাবে ঘটছে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করা জরুরী।
প্রাচীনকালে রাজনীতি ছিল একটি ব্রত, একটি মহৎ উদ্দেশ্য, যেখানে জনগণের সেবা এবং দেশপ্রেম ছিল প্রধান লক্ষ্য। তখনকার রাজনীতিবিদরা নিজেকে দেশের কল্যাণে উৎসর্গ করতেন এবং তাদের জীবনে কোনো ব্যক্তিগত লাভের আশা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের সেবা, দেশের উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে গেছে।
অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো রাজনীতির সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকেও অধিকাংশ রাজনীতিবিদের কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিল না। তারা শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের সেবা করার অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। আজকাল দেখা যায়, রাজনীতির সাথে অনেক নেতাই ব্যবসা বা অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। তারা ভোটের রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন, যা রাজনীতি ও পেশার মধ্যে সীমারেখা একেবারে মুছে দিয়েছে।
বিখ্যাত জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে এক বক্তৃতায় রাজনীতির অর্থে নতুন এক দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেন। ওয়েবার বলেন, ‘রাজনীতি একটি পেশা’। তার মতে, রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য বা জনপ্রিয়তার জন্য রাজনীতি করেন না। তাদের নৈতিক মেরুদ- থাকা উচিত এবং তাদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। ওয়েবারের দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজনীতির উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ এবং সমাজের উন্নতি হওয়া উচিত, নয়তো তা হবে কেবল ক্ষমতার লোভ। এছাড়াও, ওয়েবার বলেন, একজন রাজনীতিবিদ শুধুমাত্র ভোট পাওয়ার জন্য অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। তাদের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং তারা যখন ইতিহাসের পরিবর্তনের দিকে এগোবেন, তখন তাদের থাকতে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এবং বিচার করার ক্ষমতা। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে অনেকেই শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেন, যা বেশিরভাগ সময় বাস্তবে রূপ নেয় না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজনীতিতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩১ শতাংশ ছিলেন আইনজীবী, ১৮ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী এবং কৃষক পরিবারের সদস্য ছিলেন ১১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে ৩১ শতাংশ আইনজীবী কমে ১০ শতাংশে দাঁড়ায় এবং ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ হয়।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রাজনীতি এখন শুধুমাত্র ক্ষমতা অর্জনের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক নেতা এখন ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা নিয়েই রাজনীতি করছেন, যার ফলে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য দেশ ও জনগণের সেবা থেকে সরে গিয়ে তা ব্যক্তিগত লাভের দিকে চলে গেছে।
এখনকার রাজনীতির চিত্র আরও জটিল। পেশাগতভাবে যারা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। তারা এর মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি রাজনীতির জন্যও কাজে লাগান। এই পরিস্থিতি একটি কঠিন বাস্তবতা তৈরি করছে। ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যারা রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের সেবা করতে চান, তাদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। এখনকার রাজনীতিতে যদি পেশা এবং উপার্জনকে আলাদা করা না যায়, তবে একদিন হয়তো রাজনৈতিক দলের নেতারা শুধুমাত্র টিকিট পাওয়ার জন্যই রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন এবং জনগণের সেবা বা উন্নতি হবে না। এই পরিস্থিতি সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।

জন্মভূমি ডেস্ক December 3, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি

By জন্মভূমি ডেস্ক 19 minutes ago
খুলনাতাজা খবর

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী

By জন্মভূমি ডেস্ক 32 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হত্যার হুমকি

By জন্মভূমি ডেস্ক 58 minutes ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হত্যার হুমকি

By জন্মভূমি ডেস্ক 58 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় মানুষের জ্বালানির জন্য ভরসা সমুদ্রে ভেসে আসা সুন্দরী ফল

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
সাতক্ষীরা

তালা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির পুনর্গঠন

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?