জন্মভূমি ডেস্ক : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, গতকাল বিএনপি কর্মসূচির নামে বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির হামলার এ উদাহরণকে আমরা বর্তমানে ফিলিস্তিনে গাজা উপত্যকায় যেভাবে হামলা চলছে তার সঙ্গে মেলাতে পারি।
দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম পারভেজের জানাজার নামাজ রাজারবাগ পুলিশ লাইনের শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে আজ দুপুর পৌনে ২টায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
কমিশনার বলেন, বিএনপির হামলা গাজা উপত্যকায় হামলার ন্যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর হাতেও এমন হামলা আমরা দেখিনি। পুলিশ সদস্য হত্যাসহ গতকালের সব ঘটনায় যোগ্য ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য সবকিছু করছি।
হাবিবুর রহমান বলেন, এই নৃশংস ঘটনার যাতে ন্যায় ও যোগ্য বিচার হয়, এজন্য যা কিছু করা দরকার ডিএমপির পক্ষ থেকে করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর ছবি মিলিয়ে দুজনকে শনাক্ত করে গাইবান্ধা থেকে একজন এবং ঢাকা ডেমরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গতকালের ঘটনাসহ বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ১১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারো কারো অবস্থা সংকটাপন্ন। একটু আগে খবর পেয়েছি আরও এক পুলিশ সদস্যের জীবন সংকটাপন্ন। আনুষ্ঠানিক সমাবেশের ভেতর থেকে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আমরা অনেককে খুঁজছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আনা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি গ্রেপ্তার, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। এরপর যদি তেমন কিছু তদন্তে পাই তখন দেখা যাবে। আপাতত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আপনি নিজেই বলেছেন একটা ভীতির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা সম্পর্কে বলবেন? কারণ আজও বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। যাত্রী বেশেও বাসে আগুনের দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এর জবাব আমাকে দিতে হবে না। গণমাধ্যমের কাছেই আছে। গতকাল যা ঘটেছে তা প্রকাশ্যে ঘটেছে। শুধু গণমাধ্যম নয়, সিসিটিভি, পুলিশের নিজস্ব ক্যামেরায়ও জবাব রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও একটি অনুষ্ঠানে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হাত পা ভাঙা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে। হামলাকারীদের অনেকে সাংবাদিক বেশে এসেছিল। তারাও এসেছিল ব্যাগ নিয়ে। ব্যাক-প্যাকের ভেতর থেকে বের হয়েছে ককটেল। যারা অপপ্রচার করছে, দেশে-বিদেশে থেকে কল্পনাপ্রসূত তথ্য প্রচার করছে। আমি মনে করি, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে। কেবল পুলিশ, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী নয়, পুলিশ সাংবাদিকসহ নগরবাসী মিলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিরোধী দলের অফিস বন্ধ করা হয়েছে, আটক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ফেয়ার প্লে গ্রাউন্ড ভণ্ডুল হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা। ঢাকাকে শান্ত রাখা ও নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।