এক বছরের কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক!
ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে সরকারী ১০ প্রকল্পের কয়েক লাখ টাকা কাজ না করে আত্মসাৎসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উছেছে। একই সাথে চেয়ারম্যান হয়ে এক বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকা সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দূনীতি দমন কমিশন,জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার দাবী করেছে কয়েকজন ইউপিসহসহ ভুক্তভুগিরা। অভিযোগ উঠেছে ভুমিহীন না এমন ব্যক্তিদের ভুমিহীন প্রত্যায়ন দিয়ে এবং তাদের সরকারী কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি পাইয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। তালা উপজেলার শাকদহা মৌজার এই সম্পত্তি নিয়ে সরকারের সাথে স্থানীয়দের আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এঘটনায় চেয়ারম্যান আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে কয়েক‘শ নারী পুরুষ গত ৫ মে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের শাকদহা নামকস্থানে মানববন্ধন ও ঝাটা মিঠিল সহ প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের পাশকাটিয়ে একাধিক সরকারী প্রকল্প গ্রহন এবং কমপক্ষে ১০ প্রকল্পের কাজ না করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিয়োগে সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ ইউপি সদস্য শেখ আছির উদ্দীন নাসের সরদার, রোস্তম মোড়ল মোহাম্মাদ আব্দুল হামিদ ও নাজিম সানা বাদী হয়ে গত ১১মে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকান্ড বিভিন্ন অনিয়ম,দূনীতির আখড়ার পরিনত করেছে। তিনি কোন রকম আইনের তোক্কা না করে জনগনের সেবার নামে নিজের পকেট ভর্তি মেতে উঠেছে। যুগীপুকুরিয়া সোবহান হাজীর বাড়ীর সামনে রাস্তার মাটি দ্বারা সংস্কারের ৬০ হাজার টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বড়বিলা শেখ পাড়া ঈদগাহ ময়দান গ্রামবাসী উদ্যোগে চাঁদা তুলে কাজ করেছে। কিন্তু একই জায়গায় ২ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ওই এলাকার নুর গাজীর বাড়ীর হতে জাহাঙ্গীর মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত মাটির ভরাট বাবদ ২ লক্ষ টাকায় ২৮ মাত্র হাজার টাকার কাজ করেছেন। পাটকেলঘাটা সিরাজ উদ্দীনের দোকানের মোড় হতে পাম্পের পাশ দিয়ে কলেজ মুখে ড্রেন খনন বাবদ ২ লক্ষ টাকা সর্বস্ব খুড়ে আত্মসাৎ। রাজেন্দ্রপুর কার্তিক ঘোষের বাগী হতে নির্মল ঘোষের বাড়ি অভিমুখে ইদের সোলিং বাবদ ১ লক্ষ টাকা কাজ না করে সমুদয় টাকা উত্তোলন। পাটকেলঘাটা থানার নীচু জায়গা মাটি দ্বারা ভরাটের ১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। পাটকেলঘাটা নীলিমা ইকো পার্কের রক্ষনা বেক্ষন প্রকল্প বাবদ ১ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ। করে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এডিপির প্রকল্পের আওতায় বড়বিলা রবি গাজীর বাড়ির মোড় হইতে চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাড়ির অভিমুখে ইদের সোলিং ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স বিক্রয় বাবদ পনের লক্ষ টাকা আয়। কিন্তু সরকারী কোষাগার ও ব্যাংকে জমা না দিয়ে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। এছাড়া গত দুই বছর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাড়ি-বাড়ি যেয়ে ট্যাক্সের আদায় করে কাজ না করে লক্ষ-লক্ষ টাকা হজম করেছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধন পরিষদের ভিতরে না করে বাইরে মাসুদ নামক কম্পিউটার স্থানে জন প্রতি ৩০০/৪০০ টাকা নিয়ে থাকে যা সরকারি নীতিমালার বহির্ভূত। বড়কাশিপুর পাস্তাপাল খাল পূর্নখনন প্রকল্প বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্ধের ৭০ হাজার টাকা করে করে। একই জায়গায় পান্তাপাড় খালের উপর কালভার্ট নির্মান ১লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা কাজ না করে পুরো টাকা হজম করেছেন তিনি ভিজিএফ চাল বিতরনে ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর না নিয়ে গোটাকয়েক মানুষকে কার্ডের চাল দিয়ে বাকী চাল আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি । ইউপি সদস্য রোস্তম আলী মোড়ল বলেন, চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ভুয়া প্রকল্প দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। জেসিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১লক্ষ ২৭ হাজার টাকা প্রকল্প দিয়ে মাত্র অল্প কিছু টাকা দিয়ে কোন রকম দায়সারা করেছেন।
ইউপি সদস্য নাসের সরদার বলেন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই আমার (মেম্বরের) একটি প্রকল্পের স্বাক্ষর জাল করে সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছে। বড়বিলা শেখ পাড়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, আমরা গ্রামবাসী উদ্যোগে চাদা তুলে ঈদগাহ কাজ করি। কিন্তু জানতে পারলাম ২ লক্ষ টাকা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান মাত্র ৭৯ হাজার টাকা দেয়।শেখ আব্দুল হাই পাটকেলঘাটা আদার্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ও কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বড়বিলা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া যুগীপুকুরীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়েরও সভপতি পদ তিনি প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়েগের নামে নিজের মেয়ের চাকরীসহ ১৩ জন চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী নিয়োগে এক কোটি টাকারও বেশি ঘুষ গ্রহন করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই জানান, শাকদাহ এলাকায় যারা সরকারী জায়গায় অবৈধ জায়গায় দখল আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে বলেছি। তাতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মিথ্যে বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমি কিছু লোককে ভূমিহীন সনদপত্র দিয়েছি মাত্র তা ছাড়া কারোর কাছ থেকে একটি টাকা আমি ঘুষ গ্রহন করিনি বলে দাবী করেন তিনি। বাড়ি ও সম্পত্তির বিষয়ে তিনি জানান, আমি ২০০৮সালে কালি বাড়ি এলকায় বাড়ি নির্মান করেছি। কিছুদিন আগে মেয়ের জামাইয়ের অর্থে বাড়ি সংষ্কার করেছি এবং তিল তিল করা জমানো টাকা দিয়ে নতুন বাড়িটা কিনেছি। বর্তমানে আমি এখন ৪০ লক্ষটাকা ব্যাংক ঋন রয়েছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জানান, সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ডিডিএলজিকে (স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে পরবর্তী ব্যস্থা নেয়া হবে।