তালা প্রতিনিধি : মাহমুদ শওকত আজাদ। তিনি হলেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশী নাগরিক যিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের সশস্ত্রবাহিনীতে যোগদানকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বপ্রথম ব্যক্তি। সম্প্রতি জেলাতে প্রখ্যাত ব্যক্তির মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে তাকে । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তথ্য বাতায়ন সরকারি ওয়েব পোর্টালের প্রখ্যাত ব্যক্তির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাহমুদ শওকত আজাদ জন্মগ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মৌড়াইল এলাকায়। তার পিতা মো. শওকত আলী ছিলেন; বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক। মাহমুদ শওকত আজাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে। সম্প্রতি, মাহমুদ শওকত আজাদকে সদর উপজেলার পক্ষ থেকে সরকারি ওয়েব পোর্টালে ‘বিশিষ্ট ব্যক্তির’ মর্যাদা প্রদান করেন উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি তার ইউনিয়ন সুলতানপুর-এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ‘জীবন্ত কিংবদন্তী’ উপাধি।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশি আজাদ স্থান করে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে, রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। সৈনিক জীবনে তিনি অত্যাধুনিক ব্রিটিশ সমরাস্ত্রের ওপর দক্ষতার সাথে প্রশিক্ষণ লাভের মাধ্যমে ফিল্ড ট্রেনিং সফলতার সাথে শেষ করেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সেনা ব্যারাকে বিভিন্ন মিলিটারি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণগুলোর মধ্যে ছিল কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ও নিউক্লিয়ার (ঈইজঘ) টেস্ট ইত্যাদি।মাহমুদ শওকত আজাদ ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বৈধ অভিবাসী হিসেবে কমনওয়েলথভুক্ত সদস্য দেশের নাগরিক কোটায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রয়েল সিগন্যালস রেজিমেন্ট এ যোগদান করেন। একজন রেডিও সিস্টেমস অপারেটর হিসেবে তাঁর পদবি ছিল সিগনাল্লার। পরবর্তী ধাপে তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম এর সুইনারটন ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে দ্বিতীয় ন্যাশনাল ব্রিগেড ইনফরমেশন কমিউনিকেশন অ্যান্ড সিস্টেমস অপারেশনের ওপর ক্লাস তৃতীয় ট্রেড সার্টিফিকেট অর্জন করেন।
সৈনিক জীবনের পাশাপাশি আজাদ পড়াশোনাতেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ইংল্যান্ডের বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব দি ওয়েস্ট অব স্কটল্যান্ড থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উল্লেখ্য, মাহমুদ শওকত আজাদ, ণড়ঁঃয অংংড়পরধঃরড়হ ভড়ৎ এৎবধঃবৎ ঊঁৎড়ঢ়ব (ণঅএঊ ) কর্তৃক পূর্বে আয়োজিত ঝঃৎধংনড়ঁৎম, ফ্রান্স-এ অবস্থিত ঈড়ঁহপরষ ফব ঊঁৎড়ঢ়ব-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরাম “ঝঃৎধংনড়ঁৎম গববঃরহম: ঋড়পঁং জঁংংরধ “,ঝঃৎধংনড়ঁৎম – সমগ্র ইউরোপ, রাশিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ গুলো থেকে অংশগ্রহণকারী সর্বমোট ২০০ প্রতিযোগীর মাঝে বাছাইকৃত শীর্ষ ৫ বক্তাদের মাঝে ছিলেন একজন; যেখানে তাঁর “ণড়ঁঃয ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ ” চৎড়লবপঃ শীর্ষক ৫ টি ক্রিয়েটিভ আইডিয়া -তে স্থান করে নেয়। তাঁর সৃজনশীল প্রজেক্ট এর মূলপ্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ঊঁৎড়ঢ়ব এবং জঁংংরধ মাঝে ‘ভঁঃঁৎব ষবধফবৎং ঢ়ৎড়মৎধসসব’, ‘ুড়ঁঃয ৎিরঃবৎং ঢ়ৎড়মৎধসসব’ এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ‘ণড়ঁঃয ঝবহধঃব . এবং ঞযরহশ ঞধহশ গঠন করা এবং একটি ঝঁংঃধরহধনষব ঈড়ষষধনড়ৎধঃরাব প্লাটফর্ম তৈরী করে সেতুবন্ধন করা । এছাড়া লন্ডন-এ বিপিপি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ণরত অবস্থায় তিনি বিপিপি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ওয়াটারলু ল’ স্কুল এর নির্বাচিত ব্রাঞ্চ প্রেসিডেন্ট ( খধি ঝপযড়ড়ষ ইৎধহপয চৎবংরফবহঃ ) এবং স্টুডেন্টদের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ইউনিভার্সিটির লার্নিং এন্ড টিচিং কমিটি (খবধৎহরহম অহফ ঞবধপযরহম ঈড়সসরঃঃব- খঞঈ)-তে প্রতিনিধিত্ব করেন। ছাত্রজীবনে ঢাকাস্থ সেইন্ট জোসেফ হাই স্কুল ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। স্কুল জীবনে তিনি ঢাকার সেইন্ট জোসেফ স্কুল- এ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগিতা পুরস্কার লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ চেম্বার্স অব কমার্স কর্তৃক ফাউন্ডেশন এ্যাওয়ার্ড ইন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সনদ লাভ করেন।
বর্তমানে মাহমুদ শওকত আজাদ স্কটল্যান্ডের রয়েল স্কটস আর্মি ক্লাবের আজীবন সদস্য, লন্ডনের ভিক্টোরি সার্ভিসেস আর্মি ক্লাব (ঠঝঈ), ইউনিয়ন জ্যাক (টঔঈ) আর্মি ক্লাবের সম্মানিত সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে অবস্থিত বিখ্যাত ন্যাশনাল রাইফেলস অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা (ঘজঅ) কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত আজীবন সম্মানিত সদস্য। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ আজাদ যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক হার ম্যাজেস্টি আর্মড ফোর্সেস ভেটেরান ল্যাপেল ব্যাজ পান। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসেও রয়েছে তাঁর পদচারণা। যুক্তরাজ্য সরকারের হিজ মাজেস্টি রেভেনিউ অ্যান্ড কাস্টমস (ঐগজঈ) ডিপার্টমেন্টে কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজের লিগাল ডিভিশন এ নিয়োগ পাওয়া সর্বপ্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান।
তাঁর কৃতিত্বে গর্বিত হয়েছেন জেলাবাসী। তাঁর অসামান্য কৃতিত্বে গর্বিত এলাকার মানুষ। তাদের মতে তাঁর অর্জনটুকু শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস যোগাবে। এদিকে, তাঁর এই বিরল কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশাসন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে জেলা প্রশাসনের পোর্টালে স্থান দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, “সদর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে প্রেরিত আবেদনের প্রেক্ষিতে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে ও সরকারের সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে সাবেক ব্রিটিশ সেনা মাহমুদ শওকত আজাদকে জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে তাঁর নাম স্বীকৃতিস্বরূপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
প্রখ্যাত ব্যক্তির স্বীকৃতি পেলেন সাবেক ব্রিটিশ সেনা মাহমুদ শওকত আজাদ

Leave a comment