শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা : পূর্ব সুন্দরবনে এবার মধুর সংকট দেখা দিয়েছে। বনে কাংখিত মধু না পেয়ে গত কয়েকদিনে শতাধিক মৌয়ালী বাড়ী ফিরে এসেছেন। প্রচন্ড খরা ও দাবদাহে গাছের ফুল ঝরে যাওয়ায় এই মধু সংকটের অন্যতম কারণ বলে মৌয়ালরা জানান। মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের চিন্তায় মৌয়ালীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শরণখোলা উপজেলার পূর্ব খুড়িয়াখালী গ্রামের মৌয়াল জামাল হাওলাদার বলেন, সুন্দরবনে এবার মৌমাছি নেই মধুর চাক তেমন দেখা যায়না গত ১০দিন বনের মধ্যে ঘুরে ১৫টি চাকে ১০ কেজি মধু পেয়েছি গ্রুপে ১১জন মানুষ। মহাজনের কাছ থেকে চড়াসুদে দাদন নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে মধু সংগ্রহে গিয়ে মধু না পেয়ে ফেরৎ এসেছি এখন কিভাবে মহজনের টাকা পরিশোধ করবো সে চিন্তায় আছি বলে হতাশা প্রকাশ করেন মৌয়ালী জামাল মোল্লা। একই ধরনের কথা জানিয়ে বন থেকে ফিরে আসা শরণখোলা গ্রামের মৌয়ালী আউয়াল খান বলেন, আমার গ্রুপে ১২ জন লোক। ১১ দিন বনে ঘুরে ত্রিশ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। সুন্দরবনে কাংখিত মধু না পাওয়ার কথা জানালেন চালিতাবুনিয়া গ্রামের মৌয়ালী রিয়াদুল সিকদার, খুড়িয়াখালী গ্রামের মৌয়াল ইসমাইল জোমাদ্দার ও শাহজাহান আকন ও শরণখোলা বাজারের জালাল মোল্লাসহ আরো অনেকে।
এবছর প্রচন্ড খরা ও দাবদাহের কারণে সুন্দরবনে গাছের ফুল ঝরে গেছে ফলে মৌমাছি কাংখিত ফুলের মধু সংগ্রহ করতে না পারায় মধু সংকটের অন্যতম কারণ বলে মৌয়ালরা বলেন। সুন্দরবনের নদী খালের পানিতে এখন বিষের (কীটনাশক) আধিক্য বেশি থাকায় জোয়ারের পানির ফেনা মুখে নিয়ে মৌমাছি মারা পড়ছে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক মৌয়ালী মনে করেন। সুন্দরবনে নদীর জোয়ারে সৃষ্ঠ এক ধরনের ফেনা তুলে নিয়ে মৌমাছি তাদের বাসা তৈরী করে থাকে বলে মৌয়ালরা জানান।
বনবিভাগ জানায়, সুন্দরবন থেকে মধু উৎপাদন ও এ থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন মাস পর্যন্ত মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে পারবে। এক শ্রেনীর লোক বন থেকে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ায় মৌসুম ১৫ দিন এগিয়ে এনে গত বছর ১৫ মার্চ থেকে আগাম মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ। প্রায় তিন শতাধিক মৌয়াল পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যাত্রা করে। বনে গিয়ে মৌয়ালরা তেমন মধুর চাক পাচ্ছেননা। ২/১টি চাক পেলেও তাতে মধু খুবই কম পেয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, এবছর শরণখোলা রেঞ্জ থেকে ৬শ কুইন্টাল মধু ও ২শ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনে মৌয়ালরা মধু কম পাচ্ছে। অধিকাংশ মৌয়াল তাদের নামে ইস্যু করা মধু আহরণের পাস ( অনুমতিপত্র) শরণখোলা ষ্টেশন অফিসে সমর্পণ করে গেছে বলে এসিএফ জানিয়েছেন।
প্রচন্ড খরা ও দাবদাহে সুন্দরবনে এবার মধুর সংকট
Leave a comment