শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়া খুলনাসহ সাড়াদেশে ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর শরবতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি আবহাওয়া অফিস সারা দেশে নতুন করে দাপদাহের সতর্কতা জারি করেছে। গতকাল এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপদাহ আগামী এপ্রিল সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের আকাশে কিছুটা মেঘ থাকায় গরমের তীব্রতা কিছুটা কমলেও আজ থেকে আবারও বাড়বে তাপদাহ। এর আগে গত শুক্রবার থেকে প্রথম ধাপে ৭২ ঘণ্টার তাপদাহের সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস। প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনমানুষ, স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন ফুটপাতের শরবত খেয়ে। ডুমুরিয়ায় প্রায় সবগুলো সড়কেই ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। মূলত রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা ভিড় করছেন এসব দোকানে। গরমের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন রকম শরবত বিক্রি হচ্ছে ভাসমান দোকানগুলোতে। লেবুর শরবতের পাশাপাশি রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, শাহীদানা, অ্যালোভেরা ও উলটকম্বলের শরবত।
লোকজন বলছেন, ‘প্রচণ্ড গরমে শরীরে ঘাম হচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। ‘আগে ৫ টাকা করে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি হলেও এখন ১০ টাকা। দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয় কোনো কোনো দোকানে। যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা কিংবা ফুটপাতের দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘ফুটপাতের শরবতে অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এগুলো থেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস হতে পারে। ফুটপাতে শরবত খাওয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাইরে গরম আর ঠান্ডা শরবত খাওয়ার পর শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি বহন করাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ‘নগরের তাপদাহ আসলে অনুভবের বিষয়। তাপমাত্রার যে পরিবর্তন হয়েছে তা কিন্তু নয়। তাপমাত্রা অনুভবের যে তীব্রতা তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে। যেমন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষ যদি একটি গাছের নিচে পানির কাছে বসে তাহলে ৩৬ কী ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব হবে। তার মানে অনুভবটা তাপমাত্রার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। অনুভবটা পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গেও জড়িত। অথচ সেই পারিপার্শ্বিকতা বিশেষ করে গাছপালা ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আগে অনেক সড়ক গাছের ছায়ায় পরিপূর্ণ ছিল। সেটি এখন সম্পূর্ণ কংক্রিটে । সহনীয় তাপমাত্রা অনুভব করতে হলে গাছের ছায়া দরকার। সড়কগুলো যতটাই প্রসার হয়, গাছের ছায়া ততই কমতে থাকে।
ইউএস এইডের সহায়তায় এক জরিপে দেখা গেল, ১৪ শতাংশ গাছ রয়েছে। দক্ষিণ প্রতি অঞ্চলের আরো বেশি। অথচ জনজীবনের জন্য ৪০ শতাংশ সবুজায়ন জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে নীতিমালা করেও কোনো কার্যকর পদেক্ষপ নেওয়া যাচ্ছে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করার ফলে বাতাসে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা বহন করছে। সূর্যের আলো পাথরের দেওয়াল বা ছাদ অথবা পিচঢালা সড়কে প্রতিফলন ঘটিয়ে বায়ু তাপমাত্রার প্রচণ্ড তীব্রতা তৈরি করছে। আমাদের জলাধারগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। ক্রমাগতভাবে ভরাট করে ভবন, সড়ক, কালভার্ট তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতিবেশ-পরিবেশের অনেক কিছুই ধ্বংস করেছি আমরা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে জীবিকার তাগিদে সকাল বেলা বের হন কর্মজীবী মানুষ। ততক্ষণে বাড়তে শুরু করে রোদের তীব্রতা। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলসহ সারা দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি বিরাজ করছে। গরমে দুপুরের দিকে রাস্তায় মানুষ কম থাকে। জ্যামে রোদের মধ্যে বসে থেকে মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। বর্তমান সময়টাকে অত্যান্ত সংকটময় বলে অভিহিত করেছেন পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবহাওয়াবিদ ও চিকিৎসকরা। বিশেষ করে ঠান্ডা জাতীয় পানীয় পান করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে ফুটপাত ও খোলামেলা খাবার ও পানীয় জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। বাইরের গরমের মধ্যে ঠান্ডা পানীয় পানি করে শরীরের তাপমাত্রা কমানো ভ্রান্ত ধারণা। এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
প্রচন্ড তাপদায় ঠান্ডা পানীয় ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর শরবতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
Leave a comment