বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে জানা যায়, এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বৈধ চ্যানেলে ১২৭ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসেও বৈধপথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) ৯ মাসে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স বেশি এসেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
রেমিটেন্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ, সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিটেন্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রেমিটেন্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিটেন্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিটেন্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স। অধিক বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়। তাদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। তদুপরি বাড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রেমিটেন্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০-এর দশকে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা ২০০০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৫ কোটি ডলারে। বর্তমানে তা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল রেমিটেন্স। রেমিটেন্সের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকে।
বিশ্ব বাজারে শ্রমজীবীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে পারলে তারা শ্রমের যথাযথ পারিশ্রমিক পাবেন। রেমিটেন্সও বাড়বে। রেমিটেন্স বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার অপার দুয়ার খুলে দিয়েছে। সরকার রেমিটেন্স খাতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতকে আরও প্রসারিত করবে বলেই প্রত্যাশা।