
মান্না দে, ফকিরহাট : বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় মাঠজুড়ে আগাম সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। আমন ধান কাটার আগেই বিনা চাষে ও রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদ করে কৃষকেরা এবার বাড়তি লাভের স্বপ্ন দেখছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তা, প্রণোদনা ও অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হলুদ ফুলে ভরা সরিষার ক্ষেতে মৌমাছির গুঞ্জন আর কৃষকদের ব্যস্ত পদচারণা। আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝখানে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে ও কম খরচে চাষযোগ্য এই তেলজাতীয় ফসলটি এখন কৃষকের বাড়তি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। মাঠজুড়ে ফুলের সমারোহ ইতোমধ্যেই ভালো ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত বছর ফকিরহাটে ১৬৩.৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১৮০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ১.২ টন ধরে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১৬ মেট্রিক টন। তবে মাঠের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে।
সরিষা চাষ সম্প্রসারণে সরকারি প্রণোদনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উপজেলার ৩০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে ১ কেজি সরিষা বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি পটাশ সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২১০ জন কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ সহায়তা এবং ৪০ জন কৃষককে বীজ, রাসায়নিক সার, জৈব সার ও বালাইনাশক দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবাদ হওয়া উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-২০, বিনা সরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১১।
ফকিরহাটের বিভিন্ন ব্লকের কৃষক জসিম শেখ, মিঠুন দাস ও তপন দাস জানান, একই জমিতে বারবার এক ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা কমে যায়। কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা আমন ও বোরো ধানের মাঝখানে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। এতে মাটির উর্বরতা বজায় থাকছে, পাশাপাশি কম শ্রম ও কম খরচে বাড়তি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
বেতাগা গ্রামের কৃষক পরেশ দাস ও সুধাংশু দাস জানান, আমন ধান থাকা অবস্থাতেই তারা জমিতে বিনা চাষে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেন। সেই সরিষায় ইতোমধ্যে ফুল এসেছে। যখন অন্য কৃষকেরা জমি চাষ শুরু করছেন, তখন তাদের ক্ষেতে সরিষার ফুল ও ফলন গঠন শুরু হয়েছে। আগাম সরিষা আহরণের পর একই জমিতে আবার বোরো ধান চাষ করবেন তারা। এতে বছরে একটি অতিরিক্ত ফসল পাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি চাষ, সার ও ওষুধের খরচও কমবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপুল মজুমদার জানান, অধিক লাভজনক হওয়ায় বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা এই পদ্ধতিতে চাষ করে সফল হয়েছেন, তাদের দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরিষা এখন কৃষকের জন্য লাভজনক একটি মধ্যবর্তী ফসল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে।

