ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি : খুলনার শিল্পাঞ্চল এখন মৃত শিল্পাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানা অধিকাংশ জুট মিল গুলো শ্রম আইন লঙ্গন করে বছরের পর বছর বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মিলগুলোর মালিকগণ প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৮ শ” কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। এ সকল মিলের শ্রমিক – কর্মচারীদের প্রায় ১শ ৪০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে যা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর মিলগুলো বন্ধ করে রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকটি মিল আংশিক চালু রেখে শ্রমকি-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে ফায়দা লুটছে এমন অভিযোগ শ্রমিক-কর্মাচরী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের। তাদের দাবী মিলগুলোর মালিক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করায় অনাহারে-অর্ধাহারে প্রায় ৩ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং শতশত শ্রমিক অর্থ অভাবে বিনাচিকিৎসায় ধুকেধুকে মৃত্যু পথযাত্রী। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার দাবীতে ফেডারেশন ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। শুধুমাত্র ৭টি ব্যক্তিমালিনা জুট মিলের মালিকদের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৭শত ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এ সকল মিলের শ্রমকি-কর্মচারীদের মালিক কর্তপক্ষের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১শত ৪০কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে ঋণের টাকা অন্যখাতে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ সকল জুট মিলের প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক পরিবার অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরী পরিশোধ. মিল চালুসহ বিভিন্ন দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে মাঠে রয়েছে ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ। এদিকে আজ খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন খুলনার বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে সক্রিয় বেসরকারী পাট, সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন । গতকাল বেলা ২ টায় ফুলবাড়ীগেটে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রমিক নেতারা বলেন মুজুরু কমিশন কার্যকর, শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ, বন্ধমিল চালু, শ্রমিক ঠকানো মালিকদেরকে আইনের আওতায় আনা, ফেডারেশন ঘোষিত ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মিল কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তরা, সোনালীসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রায় ২শত ৭০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। শিরোমনির আফিল জুট মিলস ১৯৭২ সালে সরকারি ভাবে চালু হয় পরবর্তিতে মিলটি ব্যাক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। মিলে শ্রমিক-কর্মচারী সংখ্যা স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে ছিলো ৮শ ৬০ জন । মিলটি কিছুদিন আগে হ্যামকো কোঃ কিনে নেয় এবং কয়েকজন শ্রমিক এর পাওনাও পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। বর্তমানে বেসরকারী এ জুট মিলগুলো দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা জীবন জীবিকার তাগিদে অনেকে ভ্যান-রিক্সা , ইজিবাইক চলিয়ে সংসার চালাচ্ছে। অনেকে আবার দিন মুজুরের কাজ বেছে নিয়েছে।
বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মাচরী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান বলেন, খুলনাঞ্চালের বেসরকারি জুট মিল গুলোর মালিকরা ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মিলগুলোকে বন্ধ অথবা নামেমাত্র চালু রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবার অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। টাকার অভাবে বিনাচিকিৎসায় ৩ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে মিল গুলোর যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সুষ্ট ও সুন্দর ভাবে মিল চালানো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি ও খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান এর আশ্বাসে আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসুচি সাময়িক স্থগিত করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুলনার জনসভা থেকে যদি বেসরকারী জুট মিলের শ্রমিকদের সমস্যার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন না করেন তাহলে আমরা ফেডারেশনের মিটিং করে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসুচি নিয়ে রাজপথে নামবো।