সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : বনজীবী হারা সুন্দরবন মানুষ শূন্য অবস্থায় শুধু ধুধু করছে সুন্দরবনের নদী খাল সুন্দরবনের নদী খালের পানি গুলো এক প্রকার বদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে নেই কোন মানুষের খোঁজ। মাঝেমধ্য বনরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহাল করছে কিন্তু বনজীবীদের কোন খোঁজ নেই তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে বনজীবীরা প্রবেশ করতে পারছে না সুন্দরবনে সে কারণে সুন্দরবনের নদী খাল নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা । সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান গেছিলাম সুন্দরবনের ভিতরে কিন্তু শুধু পানি আর পানি ধুধু করছে সুন্দরবন খোঁজ নেই কোন মানুষের তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়ে বনজীবীরা নিজ নিজ বাড়িতে আছেঅথবা ভিন্ন কোন কর্মসংস্থানে জড়িয়ে পড়েছে । তিনি আরো বলেন বনবিভাগ সহ আরো কয়েকটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই তিন মাস সুন্দরবনের যাতে কোন প্রকার কেহ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য রাত-দিন নিরলস ভাবে টহাল চালিয়ে যাবে ।প্রতিবছরের মতো এ বছরও আজ থেকে ৩ মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার “১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট” পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশসহ সাধারণ মানুষের চলাচলেও থাকবে নিষেধাজ্ঞা,বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট। ২৪ এপ্রিল থেকে সপ্তাহ জুড়ে বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে।
প্রতিবছর সরকারী ভাবে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ এবং বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ইতোমধ্যে গহীন সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছেন সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালরা। স্থানীয় বিশ্লেষক মতে সুন্দরবনের পড়ের ৮৫ শতাংশ মানুষ সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে এ জনপদের অধিকাংশ মানুষ, তিনবেলা খেতে পারে না তারা। আজ থেকে কিভাবে চলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নির্ভরশীলরা। কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
আব্দুল হামিদ গাজী নামের এক বনজীবী বলছেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই তাদের সংসার চলে। তিন মাস সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকাও নেই। বন্ধের দিনগুলোয় তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক স্টেশন রয়েছে। আর এসব স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বন-বিভাগ মিলে রয়েছে প্রায় বারো হাজার বি এল সি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেডএম হাসানুর রহমান। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন এই তিন মাস সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া বন প্রাণীর প্রজনন মৌসুম হিসেবে সরকার সব ধরনের প্রবেশ অধিকার নিষিদ্ধ করেছে আমরা সেটিকে বাস্তবায়ন করছি। এই তিন মাস বি এলসিধারী বনজীবীদের জন্য সরকার খাদ্য সহতার ব্যবস্থা করেছে। তবে সেটি তুলনামূলকভাবে কম বলে স্বীকার করেছেন পশ্চিম সুন্দরবনের এই বন কর্মকর্তা।
উপজেলা মৎস্য সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৩ হাজার ৯২৮ জন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তার চাল পাবে মাত্র ৮ হাজার ৩২৪ জন। এসব জেলেকে ৩ মাসে দুই ধাপে ৭৭ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনে ওপর নির্ভরশীল পশ্চিম সুন্দরবনের অপূর্ব সুন্দরবনের প্রায় লক্ষ ধিক। এর।বেশি বনজীবী ও ট্রলার চালক বেকার হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবন পাড়ের বাসিন্দা বনজীবী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।
একই কথা বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামের বাসিন্দা শামিম হোসেনের গেল কয়েকদিন সুন্দরবন মাছ ধরার কাজে গিয়েছিল নিষেধাজ্ঞা কথা শুনে লোকালয়ে এসেছেন, যা উপার্জন করেছে তা দিয়ে কোন রকম ১ মাস চলতে পারবে তার পরের ৬০ দিন সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই।
বনজীবী নারী উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক শীফালী বেগম বলেন আসলে আমাদের জেলেদের কষ্ট ও হয় আবার সুন্দরবনের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। তবে নিয়ম চলে আসছে অনেক বছর আগে থেকে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা।স্টেশন কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, সুন্দরবনের বন্য প্রাণীসহ নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জুন থেকে পরবর্তী তিন মাস সুন্দরবন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এ সময়ে কোনো পর্যটক বা বনজীবী প্রবেশ করতে পারবেন না। বনজীবীদের বর্তমান খুব দুরহ অবস্থায় জীবন চলছে বলে জানিয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মধুজিৎ রপ্তান তিনি বলেন বনজীবীদের ঘরে ঘরে চাপা ক্ষুধার যন্ত্রণা চলছে সরকার যে সহতা দিচ্ছে সেটি খুব স্বল্পমাত্রা এটিকে আরও বাড়াতে হবে না হয় এখন তিন মাস পরে আবার দুই মাস বছরে পাঁচ মাস সুন্দরবনে প্রবেশ অধিকার নিষিদ্ধ থাকে এই পাঁচ মাসের জন্য বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে তাহলে সরকারের আইন বাস্তবায়ন হবে। এ ব্যাপারে কথা হয় শ্যামনগর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাম্মৎ রনি খাতুন এর সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান ৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশ অধিকার সম্পূর্ণ নিষেধ এটা আমাদের সবার জন্য প্রযোজ্য কারণ সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পাদ সুন্দরবন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ এই সম্পদ টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। তিনি আরো বলেন সরকারিভাবে বনজীবীদের এই তিন মাস যে খাদ্যসহতা দেওয়া হচ্ছে সেটিতে আসলে বনজীবীরা খুশি না এটা আমরা বুঝি। তিনি আরো বলেন সরকারিভাবে যাতে এই তিন মাস বনজীবীদের খাদ্যসহতা বাড়ানো যায় সেজন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানাচ্ছি।