জন্মভূমি ডেস্ক : প্রায় দুই সপ্তাহ আগে দিনমজুর মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মুন্নী আকতার (২৪) গ্রামের বাড়িতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কয়েক দিনে ১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। এরই মধ্যে মুন্নীর রক্তের অণুচক্রিকা (প্লাটিলেট) কমে ২৫ হাজারে নামে। ১৩ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে আসেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর স্ত্রী এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন। ওষুধ ও চিকিৎসার খরচ চালানো নিয়ে তিনি চাপের মধ্যে আছেন। মনিরুল ইসলামের বাড়ি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার একটি গ্রামে। তিনি ঢাকার একটি করাতকলে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সরকারি এই হাসপাতালে আসার পর গত চার দিনে ওষুধ, স্যালাইন, টেস্ট করাতে গিয়ে মনিরুলের আরও ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো মুন্নী পুরোপুরি সুস্থ নন। তবে গত বৃহস্পতিবার তাঁর প্লাটিলেট বেড়ে ৫৫ হাজার হয়েছে। শয্যায় জায়গা না থাকায় মেঝেতে রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম বলছিলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে তিনটি স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পেয়েছেন। অন্য সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। তিনি অল্প আয়ের মানুষ। স্ত্রীর ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত তাঁর ২৫ হাজারের বেশি টাকা চলে গেছে। ধারদেনা ও আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় এই ব্যয় নির্বাহ করতে হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এসেও এত চিকিৎসা ব্যয় অসহনীয়।
শুধু মনিরুল নন, তার মতো গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজনকে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাঁরা অসহনীয় চাপের মধ্যে আছেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতাল থেকে মূলত প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ ছাড়া এখন আর তেমন কিছু রোগীদের মেলে না। স্যালাইন থেকে শুরু করে অন্য সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার এলাকার শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী রুবিনা আক্তার (৩৫) সাত দিন ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি। শাহাদাত জানালেন, সাত দিনে তার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রতিদিন দু’টি করে ইনজেকশন দিতে হচ্ছে। প্রতিটির দাম ৭০০ টাকা। ডেঙ্গু চিকিৎসা যে এত ব্যয়বহুল আগে জানতেন না। সরকারি হাসপাতালেই এ অবস্থা, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালের অবস্থা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। এখন যে রোগী নতুন ভর্তি হন, তিনি ওই দিন স্যালাইন পান না। এর পরদিন থেকে পান। তবে হাসপাতালে সব ওষুধের সরবরাহ নেই। যা আছে, সেগুলো রোগীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। চিকিৎসা ব্যয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকার প্রতিবছরই চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে সময় লাগবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আগের কয়েক বছর আমরা দেখেছি, বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঢাকাসহ বড় শহরে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। এবার শুরুতে তা থাকলেও জুলাই থেকে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়া রোগীরাই হাসপাতালে আসছেন। চলতি মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’