সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : গত ১৭ থেকে ১৮-১৯ জুন ৪৮ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় ৩০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এই বৃষ্টিপাতে জেলার শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীরা। এ সংক্রান্ত একটি খবর বেশ কিছু গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত ওই খবরে জেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও বাজারে পানি জমে চলাচলের ব্যাঘাট সৃষ্টির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জেলা সদরের বাঁকাল, কাটিয়া, মুনজিতপুর, তালা ও কলারোয়ার কিছু অংশে বাসাবাড়ির সামনে হাঁটুসমান পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় উঠে এসেছে। সবে বর্ষা মৌসুম শুরু। এখনও সামনে রয়েছে পুরো মৌসুম। সামান্য বৃষ্টিপাতে যদি এই অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার জলাবদ্ধতার চিত্র কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় জনগণের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি দীর্ঘদিনের। কেননা এ সমস্যা একদিনের নয়। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা সমাধানে জেলাবাসি আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন।দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরা অঞ্চল অতি ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকা। জলাবদ্ধতা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা প্রভৃতি সমস্যার কারণে এ অঞ্চল ক্রমশঃ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং বাস্তুভিটা ত্যাগ করে স্থানান্তÍরিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট জেলা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্তর্গত। এর দক্ষিণে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত সুন্দরবন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সৃষ্ট সমস্যা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি প্রভৃতি সমস্যার সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় সমস্যা তথা, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা এবং সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষার সংকট।সাতক্ষীরা জেলার প্রধান ৩টি নদী ইছামতি, বেতনা ও কপোতাক্ষ নদ উপরে মাথাভাঙ্গা নদীর মাধ্যমে পদ্মা প্রবাহের সাথে যুক্ত। বেতনা ও কপোতাক্ষ নদ দেড় শ’ বছর পূর্বে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সাতক্ষীরা অঞ্চলে এখন আর পদ্মা প্রবাহের কোন পানি আসে না। ইছামতি নদীতে বর্ষাকালে সামান্য কিছু পানি পাওয়া যায়। মিষ্টি পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে নদীতে পলি জমার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।আর এ কারণেই একটু বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা শহরসহ আশপাশের অসংখ্য গ্রাম ডুবে যায়। রাস্তার উপরেই থাকে কোমর সমান পানি আর উঠানে বুক সমান। বারান্দা, ঘর, রান্নাঘরে মাছ খেলা করে। টয়লেটগুলো থাকে পানির নিচে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানি। পশুপাখির মরা দেহ, টয়লেটের বর্জ্য ভেসে বেড়ায় এক উঠান থেকে অন্য উঠানে। এভাবে চলে বছরের ছয় মাস। ফলে, মারা যাচ্ছে এলাকার অধিকাংশ গাছপালা।সাতক্ষীরায় খাল রয়েছে প্রায় ৪২৯টি। এসব খাল দিয়ে পৌরসভা ও উপজেলা শহরের পানি নিষ্কাশন হয়। তবে দখল-দূষণে অধিকাংশ খালের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ কারণে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাসহ তিন উপজেলায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালে ৪৭৬ টাকা ব্যয়ে নদী ও বদ্ধ খাল পুনঃখনন প্রকল্প নেয়া হলেও নিরসন হয়নি জলাবদ্ধতা।জলাবদ্ধতা নিরসনে আগাম প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। এ সমস্য নিরসনে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য দখলকৃত খাল ও পানি নিষ্কাশন ড্রেন উন্মুক্ত করতে হবে। সরকারি রাস্তা মাছের ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া বন্ধ করা হোক। পলি ভরাট হওয়া স্লুইস গেটের দুপাশের মাটি বর্ষার আগে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। নদী ও খালের প্রবাহে সকল বাঁধা দূর হোক। সকল পুনঃসংযোগ স্থাপন হোক।-এ প্রত্যাশা আমাদের।