বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলা শহরের একমাত্র যৌন পল্লীটি স্বাধীনতার পূর্বে সৃষ্টি হয়ে এখনও চলছে নানাবিধ সমস্যার মধ্যদিয়ে। নেই পুর্নবাসনের কোন ব্যবস্থা। দিন আসে দিন যায় তাদের অবস্থার উন্নতির হাওয়া লাগেনা তাদের ভাগ্যে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গৃহীত উদ্যোগ টেকসই ভাবে এখনও দেখিনি আলোর মুখ। বাগেরহাট জেলা শহরের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের কর্মকারপট্টি নামক স্থানে ভাড়ায় নেয়া আবাসন ব্যবস্থায় যৌনপল্লীর কর্মীরা পর্যায়ক্রমে এ পল্লীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। জীবনের শেষ বয়সে এসে তাদের কোন আয় রোজগারের পথ না থাকায় খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। যৌনকর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাবলম্বী করার দাবী দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত যৌন পল্লীগুলির মধ্যে বাগেরহাট শহরের যৌন পল্লীটি এক সময়ের খুবই আলোচিত যৌনপল্লী। নিয়মিত আয়-রোজগার না থাকায় বাগেরহাট শহরের যৌন পল্লীর কর্মীরা পর্যয়ক্রমে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আর যারা আছে তারা কোন রকম টিকে আছে। বাগেরহাট জেলা শহরের যৌনপল্লীর খোঁজ-খবর নিতে গেলে নতুন পুরাতন ও মধ্যম সময়ের একাধিক কর্মী তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ প্রতিববেদক কে বলেন, সমাজ ও পরিবারের নানা অসংগতির কারনে, বিভিন্ন বিপাকে পড়ে আমরা এ পেশায় এসেছি এবং পল্লীর নিয়ম-নীতি মেনে দেহ ব্যবসা করি। বাগেরহাট যৌনপল্লীর যৌন কর্মীদের নিয়ে পরিচালিত জীবনের অধিকার সংঘ নামক সংগঠনের সভানেত্রী নাসরিন আকতার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অযত্ন আর অবহেলায় এখানকার কয়েকটি পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন আসে বিভিন্ন ধরনের সহায়তার আশ^াস দেয় কিন্তু প্রয়োজনমতো সহযোগিতা আমরা পাই না। আমাদের মধ্যে যারা যারা এ পেশা ছেড়ে পূর্নবাসিত হতে চাই তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিক। আমাদের এই পল্লীতে সুপেয় পানির সমস্যা আছে। স্যানিটেনশ ব্যবস্থার অভাবও রয়েছে। বর্তমানে এ পল্লীতে রেজিঃকৃত অর্ধশতাধীক নারী আছে। এদের মধ্যে বৃদ্ধ আছে ১৮/১৯ জন। খদ্দের যা হয় তাতে ঘর ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে কষ্ট হয়। আমাদের সন্তানরা নিকটস্থ প্রাইমারী স্কুলে যায়। যখন জেনে যায় যে, তার মা একজন যৌনকর্মী তখন স্কুলে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আমাদের সন্তানদের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসনের বিষয়ে এ পল্লীতে বিশ বছর ধরে থাকা এক নারী বলেন, সরকারীভাবে আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসনের সুযোগ হয়নি। বেসরকারীভাবে সিএসএস পুর্নবাসন করেছিল প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিল তাদের মধ্যে আমি একজন তবে কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত হয়নি। এখানে যে কয়েক জন বৃদ্ধ হয়ে আছেন তাদের মধ্যে দু এক জন পল্লীর মধ্যে টং দোকান দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে জীবন অতিবাহিত করছেন। আবার অনেকে সরকারীভাবে সমাজ সেবা থেকে বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছেন। তবে বৃদ্ধ বয়েসে যৌন কর্মীদের যাওয়ার কোন যায়গা না থাকায় সরকারের কাছে পুনঃবাসনের সাথে সাথে তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবী করেন এ পল্লীর যৌনর্কর্মীরা। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বাগেরহাট শহর শাখার কর্মকর্তা এমএম নাজমুস সাকিব বলেন, যৌনকর্মী হিসাবে নয় মানুষ হিসাবে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সুপারিশে সরকারীভাবে বৃদ্ধাদের ভাতার আওতায় নিয়ে সমাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির অন্তর্ভক্ত করা হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, বাগরহাটের যৌনপল্লীটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে। পৌরসভার পক্ষে যতটুকু সহযোগিতা সরকার দেয় সেই সহযোগিতা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করি। বাগেরহাট পৌরসভার যৌনপল্লী সংশ্লিষ্টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানিয়া খাতুন বলেন, যৌন কর্মীদের স্যনিটেশন বা সুপেয় পানির ব্যবস্থায় আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়াও সমাজসেবা কতৃপক্ষ সরকারীভাবে এবং বেসরকারী ভাবেও অনেক সংস্থা যৌনকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কাজ করছে। ফলে তাদের সমস্য থাকার কথা নয় প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে আমরা অগেই যৌন পল্লীর কর্মীদের খোঁজ খরব নিয়ে থাকি। জেলা প্রশাসনও সার্বিক সহযোগীতা করে। বাগেরহাটের বিশিষ্ট নারী নেত্রী এবং সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন রিজিয়া পারভিন বলেন, এই পল্লীতে অর্ধশতাধিক যৌনকর্মী আসা যাওয়া করে। আমরা সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছি এবং প্রশিক্ষন গ্রহনের পর বিভিন্ন পন্য বিক্রির জন্য একটি অনলাইন মার্কেট প্লেস সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহন করার কাজ চলমান আছে। বয়স্ক নারী এবং ভূমিহীনদের তালিকা করে ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান আছে বলে জানান তিনি। বাগেরহাটে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সিএসএস ব্রোথেল ভিত্তিক যৌনকর্মী এবং পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থকর জীবনধারা বিশেষ করে এইচআইভ/এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষিত করে ক্ষমতায়ন করার জন্য কাজ করছে। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে এসটিআই সম্পর্কিত পরিসেবা এবং স্ক্রিনিং সুবিধা প্রদানের জন্য এ্যাডভোকেসি কারে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কিত নেতিবাচক মানসিকতা দূরীকরণে এবং এর সাথে বসবাসকরী জনগোষ্ঠির দৃষ্ঠিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারনা চালানোর লক্ষে ইনক্রিসড রেজিলিয়েন্স আব পার্সন্স অ্যাটরিক্সড অ্যাগেইনস্ট এইচআইভ থ্রু এডুকেশন অ্যান্ড এ্যলিনিমেশন অব স্টিগমা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।