জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ সংবিধানের একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব তারা শিগগিরই অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ বিভাগের সংস্কারে দলীয় প্রস্তাবও অনেকটা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এ ছাড়াও দলীয় সংস্কার কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতির বিষয় ছাড়াও সংবিধান সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অন্য সংস্কারগুলো নিয়েও সদস্যরা আলোচনা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়ালি) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে গত বছর ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেয় বিএনপি। এর মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার, এই তিন বিষয়কে সংবিধানের মূলনীতি ঘোষণা করাসহ চূড়ান্ত করা সংস্কার প্রস্তাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন লিখিতভাবে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব পাঠাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করেছে। এই কমিশন ইতোমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকসহ অন্য অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠনের পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ রেখেছে কমিশন। এর পরই তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে।
এদিকে সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ তার প্রতিবেদন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনও চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। যথাক্রমে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড. আবদুল মঈন খান দুই কমিটির প্রধান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সংস্কার কমিটিগুলোর তৈরি করা প্রতিবেদন বা প্রস্তাবগুলো সরকারের চাওয়া অনুযায়ী ছয় সংস্কার কমিশনের কাছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার ও নারীবিষয়ক আরও দুটি সংস্কার কমিটি গঠনের পরামর্শ আসে। এর একটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আরেকটিতে সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
যদিও বিএনপির কমিটিগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের গঠিত কমিশনগুলোর কাছে দেবে এবং সংস্কারকাজে সরকারকে সহায়তা করার কথা বলছে। কিন্তু দলটির নেতারা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন। সে জন্য দলটি ৩১ দফা প্রস্তাবের পক্ষে জনমত তৈরির লক্ষ্যে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করছে। এর মাধ্যমে ৩১ দফার আলোকেই সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের ওপর একধরনের চাপও রাখতে চাইছে বিএনপি।
সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, নারীবিষয়ক এবং গণমাধ্যম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চারটি কমিশন গঠন করে বৃহস্পতিবার।
সংস্কার প্রশ্নে নানা আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সাবেক সচিব এ এস এম মো. নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শপথ নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই কমিশন গঠনকে নির্বাচনের পথে বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন।
তবে সংস্কার শেষ করা, নাকি শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার করেই নির্বাচন—এ প্রশ্নে এখন নানা আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। বিএনপি ও এর মিত্রদের অনেকেই নির্বাচনব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন চাইছে। আবার কিছু দল নির্বাচনের আগে সংস্কারকাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছে। এদিকে সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে পারেন।