জন্মভূমি ডেস্ক : রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ৪০ তিন পর নিহত চারজনের লাশ তাদের পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ। প্রায় দেড় মাস পর লাশ বুঝে পেয়ে চাপা কান্নায় এসব স্বজনদের মর্গ ছাড়তে দেখা যায়।
মরদেহগুলো হলো, রাজবাড়ির আবু তালহা (২৩), চন্দ্রীমা চৌধুরী সৌমি (২৮), এলিনা ইয়াসমিন (৪৪) ও পুরান ঢাকার নাতাশা জিয়াসমিন নেকি (২৫)।
ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদাউস আহাম্মেদ বিশ্বাস জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মরদেহ চারটি একবারেই পোড়া ছিল। এজন্য চেহারা দেখে শনাক্ত করার উপায় ছিল না। আদালতের আদেশক্রমে দাবিকৃত স্বজনদের ও পোড়া মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি ল্যাবে ক্রস ম্যাচিং করা হয়। এর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। আজ লাশগুলো স্বজনদের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হলো।
জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে আবু তালহার বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালীর গাংবথন দিয়ায়। তার বাবার নাম আব্দুল হক। তিনি মরদেহের দাবিদার ছিলেন। আবু তালহা ফরিদপুর রেলস্টেশনের পাশে থাকতেন। সৈয়দপুর সেনাবাহিনী পরিচালিত ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করতেন। ঘটনার দিনে তিনি ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসছিলেন। এরপর সৈয়দপুর যাওয়ার কথা ছিল।
চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমির গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার রঘুনাথপুরে। থাকতেন তেজগাঁও ইন্দিরা রোড পশ্চিম রাজাবাজারে। তার বাবার নাম চিত্তরঞ্জন চৌধুরী, মা ইতি রানী। চন্দ্রিমার মরদেহের দাবিদার তার ভাই ডা. দিবাকর চৌধুরী।
নাতাশা জেসমিন নেকি থাকতেন গেণ্ডারিয়ার নারিন্দায়। তার বাবা আবু সিদ্দিক খান সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। স্বামীর নাম আসিফ মো. খান। নাতাশার মরদেহের দাবিদার তার ভাই খুরশিদ আহমেদ।
এলিনা ইয়াসমিন থাকতেন মিরপুরের পীরবাগে। তার ছয় মাস বয়সি একটি বাচ্চা রয়েছে। এলিনার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলায়। তার বাবার নাম মৃত সাইদুর রহমান। স্বামী সাজ্জাদ হোসেন চপল। তিনি একটি বায়িং হাউজের কমার্শিয়াল সেকশনে কর্মরত।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আরও ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেন। কিন্তু সে সময় নিহতদের দেহ পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ায় তাদের পরিচয় জানানো সম্ভব হয়নি। ফলে ল্যাব পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে ৪০ দিন পর মিলল পরিচয়।
প্রায় দেড় মাস পর লাশ বুঝে পেয়ে চাপা কান্নায় এসব স্বজনদের মর্গ ছাড়তে দেখা যায়। বিচার দাবি করে তারা বলেন, রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে এভাবে যেন আর কাউকে প্রাণ হারাতে না হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে এলিনা ইয়াসমিনের মরদেহ গ্রহণ করেন ভাই মনিরুজ্জামান মামুন। নাতাশার জেসমিনের মরদেহ গ্রহণ করেন বড় ভাই খুরশীদ আহমেদ। আবু তালহার মরদেহ গ্রহণ করেন মামা মনিরুল ইসলাম এবং চন্দ্রিমা চৌধুরীর মরদেহ গ্রহণ করেন বড় ভাই ডা. দিবাকর চৌধুরী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে এলিনা ইয়াসমিনের স্বামী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন চপল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার স্ত্রীসহ কয়েকজন মারা গেছেন। আমার বাচ্চা সারাজীবন কি বলবে? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সাধারণ জনগণ কেন ভোগ করবে? এগুলো থেকে মুক্তি চাই।
নাতাশার বড় ভাই খুরশীদ আহাম্মেদ বলেন, দীর্ঘ ৪০ দিন অপেক্ষার পর আমার বোনের মরদেহ বুঝিয়ে পেলাম। এই ৪০দিন যে আমাদের পরিবার কীভাবে কেটেছে তা বুঝানো যাবে না। এরকম ঘটনার শিকার যেন কেউ না হয় এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।