
হতে পারে ক্যান্সার, হৃদরোগ কিডনি রোগ
শেখ আব্দুল হামিদ : ফুটপথে বসে বিক্রি করা খাবার সাধারণত পেপার বা বইয়ের পাতায় মুড়িয়ে ক্রেতাকে দেয়া হয়। সে খাবার অনায়াসে প্রতিনিয়ত মানুষ নিশ্চিন্তে খেয়ে চলেছে। ভুক্তারা জানেনা খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ বা বইয়ের পাতায় কালিতে লেগে থাকে ক্ষতিকর রং, পিগমেন্ট ও প্রিজারভেটিভস। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া পুরোনো কাগজে রোগ সৃষ্টিকারি অণুজীবও থাকে। অথচ এসব কাগজের ঠোঙায় বা উক্ত কাগজে মোড়ানো খাদ্য নিয়মিত খেলে, মানবদেহে ক্যানসার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগসহ নানাবিধ রোগের সৃস্টি হতে পারে।’
খুলনার পিকচার প্যালেচ মোড়, শহীদ হাদিস পার্ক, জাতীসংঘ শিশুপার্ক, স্কুল কলেজের সামনের এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের বেচাকেনা হয় দেদারছে। কোনো ক্রেতা মুড়ি নিচ্ছেন প্লেটে, কেউ বা কাগজের মোড়কে। সেই মোড়ক তৈরি হয়েছে মূলত বইয়ের পাতা বা খবরের কাগজ ব্যবহার করে।
সেই বইয়ের কাগজে এমন সব রং ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যা মানুষের পেটে গেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার মানুষের হাত থেকেও জীবাণু সংক্রমিত হয়, সেটি বই পড়ার সময় আবার মোড়ক বানানোর সময়ও। কিন্তু না ক্রেতা, না বিক্রেতা, কারও মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে এতটুকু ভাবনা দেখা যায় না। ঝালমুড়ি বিক্রেতা আসলে জানেনই না যে, এই কাগজ থেকে রোগ ছড়াতে পারে। এসব জায়গায় তিলের খাজা, পিঠাসহ বিভিন্ন লোভনিয় খাবার নারী পুরুষেরা বিক্রি করে থাকেন। তাদের কেউই জানেন না ব্যহৃত কাগজে থাকা ক্ষতিকর দ্রব্য। মোড়ে মোড়ে ঝালমুড়ি, ফুচকা, জিলাপি, পরোটা, পুরি, শিঙাড়া বা এই ধরনের খাবার পরিবেশন বা পরিবহনে যে মোড়কগুলো ব্যবহার করা হয়, তার সবই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পরোটা পরিবহনের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পাশাপাশি খবরের কাগজ কেটে তা দিয়ে খাদ্যপণ্যটি মুড়িয়ে দেন। অনেক সময়ই দেখা যায় গরম পরোটায় কাগজের অক্ষর লেপ্টে যায়।
বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থার ভূমিকাও একেবারেই দায়সারা গোছের। প্রায় এক দশক আগে করা আইনে এভাবে খাবার মোড়কজাত করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হলেও এর প্রচারেও নেই দৃশ্যমান উদ্যোগ।
পুরোনো কাগজ প্রধানত কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এরপর তা যায় মোড়ক তৈরির কারখানায়। সেখান থেকে তা আবার আসে বাজারে। এরপর কেজি বা শ হিসেবে তা কিনে নিয়ে আসা হয়। এই তৈরি ও পরিবহনের সময় এগুলোতে জীবাণুতে সংক্রমণ হতে পারে। এগুলো প্রিন্ট করার সময় যেসব রং ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বিপত্তিও আছে।
গ্যস্ট্রো লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘যখন এই কাগজ প্রস্তুত হয়, এতে ক্লোরাইড, ডলোমাইড, হাইড্রোফ্লোরিস এসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, সোডিয়াম সালফেট থাকে। আবার এগুলোতে যখন ছাপার জন্য কালি ব্যবহার করা হয়, তাতে যে উপাদান যেমন ক্যাডমিয়াম, কপার, জিংক, রং, পিগমেন্ট ও প্রিজারভেটিভস থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া পুরোনো কাগজে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবও থাকে।’
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। আবার এই কাগজগুলো যেসব জায়গা থেকে আসে সেখানেও জমে থাকতে পারে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। তাই এগুলো পরিহার করা উচিৎ।’
নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব কাগজে খাবার বিক্রি করা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
খুলনা উকিলবারের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী মোল্যা বলেন, ‘এই আইন অমান্য করলে ৩৩ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন এক বছর, সর্বোচ্চ তিন বছর, ন্যূনতম তিন লাখ টাকা ও অনূর্ধ্ব ৬ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।’ দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা তিন বছর, জরিমানা ১২ লাখ টাকা অথবা উভয় দন্ডের কথা বলা হয়েছে আইনে।