জন্মভূমি ডেস্ক : সিটি করপোরেশনের অনুমোদন না থাকলেও রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক; সবখানেই অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দিন দিন এসব বাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে সড়কে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, স্বাভাবিক চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যান্য দ্রুতগতির যান। এছাড়াও এসব অটোরিকশার কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি সড়কপরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমদিকে কেবল এলাকাভিত্তিক এসব রিকশা চলতো। তখন পুলিশি অনেক ঝামেলার মধ্যেও পড়তে হতো চালকদের। ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধান সড়কে ওঠাও নিষেধ ছিল। উঠলে পুলিশ রিকশা আটক করে থানায় নিয়ে যেতো। পরবর্তী সময়ে পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাঁদা দিয়ে অবাধে সড়কে চলাচল করা শুরু হয়। এদিকে সিটি করপোরেশন থেকেও রেজিস্ট্রেশনের কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মাঝে কয়েকদফা এসব রিকশা বন্ধের প্রচেষ্টা করলে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে চালকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এমনকি সংঘর্ষে মিরপুরের ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্য আহত ও লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় কয়েকজন রিকশাচালকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। অভিযোগ আছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তা ধারাবাহিকভাবে তাদের কাছে ‘মাসোয়ারা’ নেন। যে কারণে পরবর্তী সময়ে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। উল্টো এসব রিকশাচালক এলাকা ছেড়ে প্রধান সড়কেও চলাচল ও অবৈধ স্ট্যান্ড করতেও সাহস করেন।
সর্বশেষ গত ১৫ মে বনানীর বিআরটিএ কার্যালয়ে এক বৈঠকে সাবেক সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অটোরিকশা চালকরা বিক্ষোভ ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর চালায়। এতে নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিনের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ না করে এর চলাচলের একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলেন। তখন বিআরটিএ থেকে সেই নীতিমালা তৈরি জন্য উদ্যোগ নিতে শোনা গেলেও পরে আর কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন সড়ক সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে কথা বললেও তাদের জবাব ঢিলেঢালা। কেউ এর দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচলের নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা সাধারণ রিকশা এইসব যানবাহনের বিষয়টি আমাদের না। এটি দেখবে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। তারা যা উদ্যোগ নেয়।’
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সিটি করপোরেশনের আইনে আওতাভুক্ত নয়। আমাদের রাজস্ব বিভাগ থেকে পায়ে চালিত রিকশার জন্য রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়।’
তবে সিটি করপোরেশন থেকে রিকশার জন্য চলাচলের নির্দিষ্ট কোনও নীতিমালা দেওয়া নেই বলেও জানান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নীতিমালার বিষয়টি ডিটিসিএ (ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ) থেকে দেখলে ভালো হয়। আমাদের আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) মিটিং আছে। সেখানে আমরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়টি তুলবো।’
এবিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন ধরেননি। তবে ডিটিসিএ এর একসূত্র জানান, ডিটিসিএ আপাতত সড়কে বাসের শৃঙ্খলা ফেরাতে রুট রেশনালাইজেশন নিয়ে ব্যস্ত। আনুষঙ্গিক আরও কিছু বিষয় নিজে কাজ করছে এই সংস্থাটি। তাই ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে তাদেরও কোনও উদ্যোগ নেই।