মাদারীপুর অফিস : অভিবাসন খাতে সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি অজয় কুন্ডু। তিনি অনলাইন ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আরও ১৫ জন সাংবাদিক এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। এ বছর নবমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ২৭ মে ‘ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন: ৪ বছরে মাদারীপুরের ৪৫ জনের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিক অজয় কুন্ডু এই পুরস্কার পান। প্রতিবেদনটিতে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার করুণ গল্প তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও দালালদের দৌরাত্ম্য, আইনশৃঙ্খলা অবনতিসহ নানা ঘটনাবলি তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।
সাংবাদিক অজয় কুন্ডু মাদারীপুর পৌরসভাধীন চরমুগরিয়া এলাকার মৃত শঙ্কর কুন্ডুর ছেলে। তাঁর মা দীপা রানী কুন্ডু একজন গৃহিণী। অজয় কুন্ডু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
সাংবাদিক অজয় কুন্ডুর হাতেখড়ি মাদারীপুর থেকে প্রকাশিত জহিরুল ইসলাম খানের সম্পাদিত জনপ্রিয় দৈনিক বিশ্লেষণ পত্রিকায়। তিনি ২০১২ সালে স্থানীয় এই পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন। এরপর বাংলানিউজ টোয়ান্টিফোর ডট কমে মাদারীপুর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগ দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোয়। সাংবাদিক অজয় কুন্ডু মাদারীপুর প্রেসক্লাবের সবশেষ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
প্রথম আলোয় অভিবাসন বিষয় ছাড়াও সাংবাদিকতায় বিভিন্ন সময় তিনি সেবাখাত, কৃষি, পরিবেশ, জনদুর্ভোগ, রাজনীতি, অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার বলেন, চাহিদা অনুসারে দক্ষ কর্মী তৈরি হলে বাংলাদেশিরা ইউরোপে শ্রম অভিবাসন করতে পারবেন। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ—দুই পক্ষই উপকৃত হবে। গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করলে বাংলাদেশের অভিবাসন খাত আরও এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, অভিবাসীরা প্রতিবছর দেশে ২২ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগে জোর দেওয়া এবং প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) মোহাম্মদ শাহীন বলেন, সরকার নানামুখী উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশগামীদের দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে। দক্ষ শ্রম অভিবাসন হলে অভিবাসনপ্রক্রিয়া নিরাপদ হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। তিনি বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ, কেউ তাঁদের সমস্যার কথা শোনে না। এ কারণে তাঁরা নিজেদের প্রাপ্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান ও জুরিবোর্ডের সদস্য হিসেবে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাহনুমা সালাম খান।
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকতার অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হয়। এ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের সহায়তায় নবমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দূতাবাস এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।