শুরু হয়েছে অমর একুশের মাস ফেব্রুয়ারির। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর অর্থ পৃথিবীর সব মাতৃভাষাই স্ব-স্ব জাতির নিজস্ব ও অপরিবর্তনযোগ্য ভাষা।
সব মাতৃ ও আঞ্চলিক ভাষাকেই সমান মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা রক্তের বিনিময়ে সেই পথ দেখিয়ে গেছেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
একইসাথে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা’। কয়েক বছর ধরে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও মানসম্মত বইয়ের খরা কাটছে না। এ সংকট দূর করতে বাংলা একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, মানসম্মত বই প্রকাশে এ প্রতিষ্ঠান আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবে।
করোনার ভয়াবহতা-পরবর্তী সময়ে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকটের মধ্যে বইমেলা যাতে সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আশা করব, বইমেলার ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ থাকবেন।
বিশ্বায়নের যুগে ভিন্ন সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহে রাশ টানার কাজটি কঠিন। এখন সব দেশের সংস্কৃতিতে নানা ধরনের রূপান্তর লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় কেবল অন্ধ অনুকরণের বিপদ বহুমাত্রিক। আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এদেশের মানুষের প্রাণের মেলায় গত কয়েক বছরে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য আগে থেকেই ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এর ব্যত্যয় ঘটলে সমাজে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। একুশের চেতনা আমাদের মননে প্রেরণার যে বীজ বপন করেছে, একে সঠিকভাবে বিকশিত হতে দিলে ভিন্ন সংস্কৃতির কোনো কালিমা আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এই আবেগকে শানিত করার ক্ষেত্রে মানসম্মত বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে ভালো মানের বই সহজে পেতে পারে, সেজন্য বই প্রকাশের বাধাগুলো দূর করতে হবে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার পদক্ষেপও নিতে হবে।