ভেড়ামারা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় চন্ডিপুরে রফিকুল ইসলাম দুদু (৫০) নামের এক ব্যাক্তিকে থানা পুলিশ মারধর করার পর হত্যা করে বলে এলাকাবাসী ও তার পরিবারের দাবী। শুক্রবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটের সময় আটককৃত ৩ পুলিশকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানায় সোর্পদ করেছে। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। নিহত রফিকুল ইসলাম দুদু ভেড়ামারার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মন্ডলের ছেলে।
নিহতের পরিবারের ভাই ও চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টান সময় ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে রফিকুল ইসলাম দুদুকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এসময় সে যেতে চায়নি। এ জন্য পুলিশ তাকে মারধর করে করে মেরে ফেলেছে। এই হত্যার দায় পুলিশের। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। আমার ভাই রফিকুল কোনো মামলার আসামি নয়। মামলার কোনো ওয়ারেন্টও দেখাতে পারেনি পুলিশ। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভেড়ামারার চন্ডিপুরে পুলিশ কর্তৃক রফিকুল ইসলাম দুদু কে ব্রীজ থেকে ফেলে মেরে ফেলার অভিযোগে জনতার হাতে আটককৃত ৩পুলিশ কে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদগ্রামের চন্ডিপুর ৪ নম্বর ব্রিজের কাছে রফিকুলের চায়ের দোকান। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভেড়ামারা থানা পুলিশের এসআই সালাউদ্দীন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ব্রিজ থেকে রফিকুল লাফ দেন। পুলিশ সেখানে ধাওয়া করে তাঁকে আটক করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে পুলিশকে ধাওয়া দেন। তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে ধরে ফেলে। তাঁদের বাজারের একটি দোকানে আটকিয়ে রাখা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি।
নিহতের বড় ভাই বিসারত ইসলাম বলেন, আমার ভাইকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ পিটিয়ে ও ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কেন আমার ভাইয়ের সাথে এমন করলো জবাব চাই। তিন পুলিশ জনতার রোষে পরে মারা যেতে পারতো। আমরা আগলে রেখেছি। কারণ আমার ছেলে ও ছেলের বউ পুলিশ আমার ভাইয়ের ছেলে পুলিশ। আমরা পুলিশ পরিবার। অথচ এই পুলিশ আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আমি আমার ভাই হত্যার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই।
স্থানীয় মমিন বলেন, দুদু ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে মামলাতো দুরের কথা কোন অভিযোগ নেই। পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই। দুদু যদি ভালো মানুষ নাই হবে, তবে তার নিহতের ঘটনায় এত মানুষ কেন পুলিশের অবরোধ করে রাখবে? বিচার চাইেবে?
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান বলেন, একজনকে ব্রিজের উপরে মারধর করতে দেখি। এগিয়ে গেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাধা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ব্রিজের ১০ ফুট নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে ব্রিজের নিচে এক পুলিশ নিহতের রক্তাক্ত মরদেহর জামার কলার ধরে বসানোর চেষ্টা করে। আমরা রফিকুল ইসলাম দুদুর চেহারা দেখে পরিচয় জানতে পারি এরপরেই বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের এস আই সালাউদ্দিন সহ দুই পুলিশকে আটক করে স্থানীয় জনতা। এসময় তিন পুলিশ পালিয়ে যায়।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, দুদু নিরাপরাধ। এ ঘটনায় জনতার রোষে তিন পুলিশের জীবন বিপন্ন হতে পারতো। আমি ও নিহতের ভাই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিই। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম আসেন। তিনিসহ অনেকে মিলে তিন ঘন্টা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গ্রামবাসীর একটিই দাবি এ হত্যায় জড়িত পুলিশদের উপযুক্ত বিচার হোক।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রফিকুল ইসলাম দুদুকে হাসপাতালে আনা হয়। এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, পালাতে গিয়ে আসামির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে করে। শুক্রবার রাত ১০ টা ৩০ মিনিটের সময় আটককৃত ৩ পুলিশকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানায় সোর্পদ করেছে।
মিরপুর-ইবি থানার সার্কেল ও ভেড়ামারার দায়িত্ব প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এসময় বলেন, অপরাধ যেই করুক তার শাস্তি হবে। সকল নাগরিকদের জন্য একই আইন সে পুলিশ হোক আর যেই হোক। এ ঘটনার অপরাধীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভেড়ামারায় চা দোকানিকে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
Leave a comment