জন্মভূমি ডেস্ক : পৌষের শুরু থেকেই ঢাকায় কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। সপ্তাহের মাঝামাঝি দুই দিন শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও সোমবার সকাল থেকে ঢাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আজ সকালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানীতে। সামনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই এভাবে জেঁকে বসেছে শীত। মাঘের শুরুর দিকে শীতের এমন দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বেশ কয়েকটি জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোর থেকেই বাংলাদেশের রাজধানী কুয়াশায় ঢাকা পড়ে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমে এলেও দুপুরে ১২টা পর্যন্তও রাজধানীর সূর্যের দেখা মেলেনি। হিমেল বাতাস যুক্ত হওয়ায় বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিপাকে পড়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ।
রাজধানীর নতুনবাজার, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মিরপুর এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত অনেক মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ ও রাস্তার পাশে শীতে জবুথবু হয়ে থাকতে দেখা গেছে।
রাজধানীবাসী বলছে, এতদিন ঢাকায় এমন শীত ছিল না। রাতে কিছুটা ঠান্ডা পড়লেও দিনে মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকলেও দিনের মাঝামাঝি সময়ে সূর্যের দেখা মিলেছে। ফলে সেভাবে শীত অনুভূত হয়নি। কিন্তু আজ সকাল থেকে প্রচুর শীত অনুভূত হচ্ছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রফিকুল ইসলাম। উত্তরার অফিসে যাওয়ার জন্য বাড্ডায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই প্রচুর ঠাণ্ডা লাগছে। ঠান্ডা বাতাস থাকায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বছরে আজই মনে হয় বেশি শীত পড়েছে।’
নতুনবাজার এলাকায় রিকশাচালক নায়েব আলী বলেন, ‘এই শীতে রিকশা চালানো কঠিন। কী করব উপায়ও তো নেই। পেটের দায়ে শীতের মধ্যেই বের হয়েছি।’
শুধু রাজধানী নয়, রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশেই দাপট দেখাচ্ছে শীত। উত্তরের জনপদে বইছে কনকনে বাতাস।
শীতের কারণে লালমনিরহাট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাট, বগুড়া জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ ছয় জেলার ওপর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সকাল নয়টায় ঢাকার সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি শীত মৌসুমে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বাদলগাছী ও দিনাজপুরে। এই দুই জায়গায় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এই অবস্থায় আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
এই সময়ে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
বর্তমানে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।