মাদারীপুর অফিস : মাদারীপুরের শিবচর পৌর শহরে ময়লা আবর্জনা বর্জ্য থেকে জৈব সার ও জ¦ালানি তেল উৎপাদনের জন্য সরকারি অর্থায়নে মাদারীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌরসভা ও উপজেলার নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিবচর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরেই প্লান্টটির কার্যক্রম শুরু হলে বদলে যাবে মাদারীপুরের শিবচর পৌর শহর। হয়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন এক শহর এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয়রা। কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু শহর পরিস্কার পরিচ্ছন্নই নয়, এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত জৈব সার ও জ¦ালানি তেল কম দামে ক্রয় করতে পারবেন স্থানীয়রা। এতে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর পৌর শহরের চরশ্যামাইল গ্রামে ৩ একর জমির উপরে সাড়ে ১২ কোটি টাকা খরচে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ও মাদারীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট। পৌর শহরের ১২ টি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ি থেকে প্রতিদিন ময়লা আবর্জনার বর্জ্য পৌর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এই সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টে এনে তা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরী করা হবে জৈব সার ও প্লাষ্টিক জাতীয় বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা হবে জ¦ালানি তেল। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণ প্রায় শেষের পথে বলে জানালেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টার্নের ম্যানেজার মো. ফকরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ৯০ ভাগ শেষ করে ফেলেছি। চলতি বছরেই আমরা প্রকল্পটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব।
এদিকে স্থানীয়রা বাসিন্দারা বলছেন, এই প্লান্ট নির্মাণের ফলে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে ওঠার পাশপাশি কম দামে স্থানীয় কৃষি কাজে জৈব সার সংগ্রহ করে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা। এতে তারা আনন্দিত।
শিবচর পৌর এলাকার চরশ্যামাইল গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের শিবচর পৌর শহরের অনেক ময়লা আবর্জনা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি চালু হলে আমরা একটি পরিচ্ছন্ন পৌর শহরে বসবাস করতে পারব। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। শিবচর পৌর এলাকার আরেক ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘কোনদিন ভাবিনি এই শিবচরে এত উন্নত প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। যেখান থেকে বাড়ি বাড়ির ময়লা আবর্জনা এনে তৈরী করা হবে জৈব সার। সেই সার আবার আমাদের শিবচরের কৃষকরা কম দামে কিনে জমিতে ব্যবহার করবে। শিবচর উপজেলার আরেক বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলে শুধু পরিচ্ছন্ন শিবচরই আমরা পাব বিষয়টি এমন নয়। সেই সাথে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টে শিবচরের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরী হবে। যা আমাদের শিবচরের মানুষের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি চালুর অপেক্ষায় আছি।
শিবচর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শামীমা নাসরিন বলেন, প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষে চালু হলে বদলে যাবে শিবচরের ময়লা আবর্জনার চিত্র। শিবচরের ময়লা আবর্জনার বর্জ্য আপদ নয়, এগুলো সম্পদে পরিনত হবে। এবং তৈরী হবে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত চালু হয় সে লক্ষ্য কাজ করছি।
এই বিষয়ে মাদারীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার শামসুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌরসভা ও উপজেলার নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিবচর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটিতে বর্তমানে পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই প্লান্ট থেকে প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য থেকে জ¦ালানি তেল উৎপাদন যাতে করা যায়, সেই উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে। আমরা আশা প্রকাশ করছি, চলতি বছরেই এই প্লান্টের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। প্রকল্পটি চালু হলে পুরো শিবচর উপজেলার বাসিন্দারা এই প্রকল্পটির সুফল পাবে।
