জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক জাহাজ এফভি মেঘনা-৫-এর স্টাফ হিসেবে কাজ করেন মো. মিরাজ। জাহাজে উঠেছিলেন গত ২৪ নভেম্বর ভোর ৬টায়। চরম আর্থিক টানাপোড়েন তার পরিবারে। মা মেহেরুন নেসা অসুস্থ। স্ত্রী রেশমা আট মাসের সন্তানসম্ভবা। জাহাজে ওঠার কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়েছেন তার কানের দুল বিক্রি করে।
এরই মধ্যে ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে ৭৮ বাংলাদেশিকে আটক করেছে সে দেশের কোস্টগার্ড, যা এরই মধ্যে বাংলাদেশে আলোচিত ইস্যু। এর পর থেকে শুধু মিরাজই নন, জাহাজ দুটির ৭৮ নাবিক-জেলের পরিবার রয়েছে উৎকণ্ঠায়। শেষ পর্যন্ত স্বস্তির খবর পাওয়া গেছে। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের প্যারাদ্বীপে আটকে রাখা এই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দিতে আলোচনা শুরু করেছে ভারত। কোনো ধরনের মামলা ছাড়াই তাদের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এরই মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আলোচনা শেষে আটক জেলেদের বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এমন তথ্য জানিয়েছেন প্যারাদ্বীপ পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট সন্তোষ জেনা। এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালে (এএনআই) এ খবর এসেছে। এএনআইর খবর অনুযায়ী, সন্তোষ জেনা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারতীয় কোস্টগার্ড জানিয়েছে, দুটি জাহাজে অন্তত এক কোটি টাকার মাছ রয়েছে। আটক বাংলাদেশিদের প্যারাদ্বীপ মেরিন থানায় আটকে রাখা হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি খাদ্য ও পোশাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে সবাইকে প্যারাদ্বীপ বন্দর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাদের নিরাপদ স্থানে রাখা হয়।
এদিকে আটকদের পরিণতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। মো. মিরাজ ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার তথ্য তার স্ত্রী রেশমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, মিরাজের বড় ভাই মো. বেলাল। কিন্তু রেশমা সে কথা বিশ্বাস করছেন না বলে জানান বেলাল। তিনি বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ। ছোট ভাই মিরাজের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এ সময় মিরাজের খুব প্রয়োজন ছিল। আমি ভাইকে ফেরত চাই।’
এদিকে বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে এফভি মেঘনা-৫ জাহাজের অফিসে ভিড় করেন আটকদের স্বজনরা। মো. আমীর হোসেন নামে এক স্বজন বলেন, ‘এফভি মেঘনা-৫ জাহাজে আমার ছেলে রিয়াজ, দুই ভাতিজা জামাল উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন আছে। তারা যেদিন জাহাজে উঠেছিল সেদিন কথা হয়। সাগরে নেটওয়ার্ক থাকে না। এ কারণে আর কথা হয়নি। শুনেছি তাদের জাহাজসহ ভারতীয় বাহিনী নিয়ে গেছে।’
মামলা ছাড়াই দেশে ফেরার সম্ভাবনা ভারতে আটক নাবিক-জেলেদের
Leave a comment