যশোর অফিস : যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসানকে বিদায় সংর্বধনা দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন সিভিল সার্জন হিসাবে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা আগামী ১জানুয়ারি যোগ দিচ্ছেন। একই দিনে ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করবেন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে সিভিল সার্জন অফিসসহ জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনুষ্ঠানিক ক্রেস্ট প্রদানের মধ্যদিয়ে বিদায় জানান।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার(২৪ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব শোভন রাংসা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডাক্তার মাহমুদুল হাসানকে বদলির আদের্শ দেয়া হয়। আদের্শ পেয়ে সোমবার তিনি যশোর জেলার সিভির সার্জনের দায়িত্ব ডেপুটি সিভিল সার্জনের কাছে বুঝিয়ে দেন।
এদিকে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তার মাহমুদুল হাসান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। চলতি বছরের ১০জুন তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। তার নিকটাআত্মীয় কুড়িগ্রাম ৪আসনের সাবেক সংসদ বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ কাজী নাবিল আহমেদ ও কেশবপুর আসনের সাবেক সংসদ আজিজুর ইসলামের ডিও লেটার নিয়ে তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হন। অভিযোগ ছিলো ডাক্তার মাহমুদুল হাসান যশোরে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে মালিকদের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এমনকি নতুন লাইসেন্সের জন্য টাকা অংক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বিগত দিনে সিলগালা করা অনেক অযোগ্য ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চালু করে দিয়েছেন। আউটসোসিং নিয়োগ দেওয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, সারাদেশে যখন শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছিলো। তখন এই আন্দোলনের বিরোধীতা করে যশোরে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক মিনিট ১৯সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসানকে বলতে শোনা যায়-আন্দোলনকারীদের তিনি ফ্যাাসিবাদি,জঙ্গি বলে আখ্যা দেন। তিনি দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে যে হত্যাযঞ্জ ভাঙচুর চালানো হয়েছে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। সর্বস্তরের চিকিৎসকের এক দফার দাবির বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হওয়ার অনুরোধ জানান সিভিল সার্জন। সূত্রটি আরও জানায়, ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে গত ৫আগস্ট সরকারের পতন হলে তিনি ভোল পাল্টে শিবির সাজেন। আধিপত্য বিস্তার করতে কর্মস্থলে কয়েকজন বহিরাগতকে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেন। সিভিল সার্জন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ফ্যাসিবাদ সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিতি অর্জন করা ডাক্তার মাহমুদুল হাসান শিবির সেজেও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। যশোর থেকে তাকে ফরিদপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এতে খুশি হয়েছেন সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
সিভিল সার্জন অফিসে ডাক্তার মাহমুদুল হাসানের বিদায়ী সংর্বধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি (ভারপ্রাপ্ত) সিভির সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক রাসেল, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহেনেওয়াজ, সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলীসহ জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।