ডেস্ক নিউজ : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আমরা তর্ক, বিতর্ক করতে গিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, যাতে করে সে স্বৈরাচার হোক বা এমন কেউ হোক যারা বাংলাদেশের ভালো যারা চায় না, এমন কেউ সুযোগ পেয়ে যায়, এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। এবং দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতি ও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আজ দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালী বক্তৃতায় এসব কথা বলেন দলের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, তিনি বলেন আসুন আমরা শপথ নেই আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের রায় নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।
স্মৃতি রোমন্থ করে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এর হেলথ ক্যাম্প খুলনা থেকে শুরু হয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। সংস্কার নিয়ে অযাচিত আলোচনা না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি ক্ষমতায় গেল নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী করবেন তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। অন্তর্র্বতী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
গণতন্ত্র হচ্ছে পানি ফিল্টারের প্রক্রিয়ার মতই একটি প্রক্রিয়া। গণতন্ত্র যত প্রাক্টিস হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে।
তিনি বলেন দলকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়া তা গঠনতন্ত্রে আছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই প্রক্রিয়া যদি আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে দল গণতান্ত্রিক উপায় যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পাবে। তাই আগামী দিন দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আদর্শ নিয়ে খুলনা জেলা ও মহানগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাবেন এমন নেতৃত্বকেই নির্বাচনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন অতীতে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল ফলে সঠিক কাজ করতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি যদি আমাদের সীমাবদ্ধতা জনগণকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি তাই মানুষ আবারো আমাদেরকে ভোট দিবে। আমাদের আগামী দিনের কাজ শেষ করার সুযোগ দেবেন।
তিনি বলেন আসুন আমরা শপথ নেই আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের রায় নিয়ে সারা বাংলাদেশের নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থান ও বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।
সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত উঠিয়ে ধানের শীষে ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টায় সম্মেলন শুরু হয়। খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে রঙ বেরঙয়ের ক্যাপ-টি শার্ট পরে ও প্লাকার্ড হাতে আসেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ সম্মেলনে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেছে। আর বাংলাদেশ যখনই কোন সংকটে পড়েছে তখনই কান্ডারী হয়ে এসেছে জিয়া পরিবার। স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭৫ পরবর্তী গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা আর ২৪ সালের ফ্যাসিবাদ হাসিনা পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব এই জিয়া পরিবারে দিয়েছে। যার অন্যতম রূপকার তারক রহমান। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের হত্যা ঘুম নির্যাতন আর ৫৭ সেনা হত্যার কারণে শেখ হাসিনার ৫৭ বার ফাঁসি হতে পারে। এই বাংলাদেশের মাটিতেই শেখ হাসিনার বিচার হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনিন বলেন, ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটাতে কাজ করে গেছেন ছাত্র জনতার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী শক্তি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের সাথে নিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণের কাজ করছি। এই নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা নিয়ে বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাব এই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার। এসময় তিনি অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আহবান জানান।
খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ মানুষের যদি সংযোগ ভীত মজবুত করা যায় তাহলে এই সম্মেলনের সার্থকতা ফুটে উঠবে। এটা করতে পারলেই দেশনেত তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সমর্থ হবে বিএনপি।
ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন দক্ষিণ বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা সুসংহত করতে বিএনপির কোন বিকল্প নেই. কারণ এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জি রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এদেশের দ্বিতীয় বোর্ডের মতো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং দেশনায়ক তারিক ভ্রমণের নেতৃত্বে আগামী দিনের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সংঘটিত হবে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন দীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। সেই কারণে বিএনপিকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবেন না। সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন শামীমুল ইসলাম শামীম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি নেতা সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কাজী মিজানুর রহমান, কে এম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল।
সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পড়ে শোনান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পড়ে শোনান সৈয়দা রেহানা ঈসা।
বিকালে জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে লড়ছেন ১২ জন। ভোটার রয়েছেন ৫০৫ জন। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর। আর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর গঠিত হয়েছিল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর আগে সকালে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা আমান উল্লাহ আমান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।