যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে?

জন্মভূমি ডেস্ক : সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত দশ শতাংশ শুল্ক আরোপের জবাবে বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ কার্যকর করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা আরও জোরদার হলো। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য সুযোগ আনতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কেউ-কেউ সুযোগটি গ্রহণ করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউবা বলছেন- বিদ্যমান প্রেক্ষাপট পোশাক খাতের জন্য কিছু লাভ এনে দিতে পারে বলে মনে করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে এই বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী গত ৪ ফেব্রুয়ারি সব চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি কার্যকরের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেইজিংও মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের চীনা পণ্যে দশ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় চীনের তৈরি পোশাক খাতের ওপরেও এর প্রভাব পড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ এনে দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ঢালাওভাবে চীনের সব পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। এটি চীনের পোশাক খাতে প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে তার সামান্য অংশ অর্ডারও নিজের দিকে আনতে পারলে বিরাট লাভবান হওয়া যাবে। তিনি অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষে এটি সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ ভিয়েতনামের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছে সেখানে। বাংলাদেশের উচিত হবে সামান্য সুযোগ থাকলেও সেটি নিয়ে কাজ করা এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়ানো।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চীন ও ভিয়েতনাম থেকেই প্রায় ৪০ শতাংশ তৈরি পোশাক আমদানি করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে করে মাত্র ৯ শতাংশ। তবে সেদেশে রপ্তানি করা শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে আরও রয়েছে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া।
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চলতি বছরের জানুয়ারিতে জানিয়েছিলো ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে তৈরি পোশাক, যার মূল্য সাত দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার এবং এটি দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
ব্যবসায়ী ফজলুল হকের মতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা কোন পর্যন্ত যায় সেটি সম্পর্কে এখনি ধারণা করা কঠিন। তবে আপাত দৃষ্টিতে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারলে বাংলাদেশ শুধু তৈরি পোশাক খাতে কিছুটা হলেও লাভবান হওয়ার সুযোগ পেতে পারে। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, অনিশ্চয়তার জায়গাটি এখনও পরিষ্কার না। সামনে বোঝা যাবে। তৈরি পোশাক খাতে চীন থেকে কিছু অর্ডার ডাইভার্ট হতে পারে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংক সহায়তার ক্ষেত্রে চলমান সমস্যার সমাধান করা গেলে তার কিছুটা হলেও সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ।
অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বাণিজ্য পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতিকে ধীর করবে। এর ফলে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানে ও বাংলাদেশের মতো স্বল্প মাত্রায় রপ্তানি করে এমন দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য সৃষ্টি হওয়া সুযোগ গ্রহণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক খাত, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট এবং রিজার্ভের যে পরিস্থিতি তাতে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তাই সুযোগ আসলেও নেবার সক্ষমতা নেই। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন ও চীনের সংরক্ষণবাদ নীতি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। (সংক্ষেপিত)।