বিজ্ঞপ্তি : খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতি বিজড়িত বধ্যভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ২৫ মে যোগদান করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। সে হিসেবে তার কর্মমেয়াদের দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। করোনা মহামারীর এক স্থবির পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই ছিলো তার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এছাড়া গবেষণায় উদ্যম সৃষ্টি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সচল করাও ছিলো চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে গত দুই বছরে তার নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে কেটে গেছে স্থবিরতা। ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডে এখন আলো ছড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রধান এ বিদ্যাপীঠটি। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এপিএ মূল্যায়নে পেয়েছে আশাব্যঞ্জক মূল্যায়ন। গবেষণা তহবিলের জন্য তৈরি করা হয়েছে নিজস্ব ফান্ড। প্রণয়ন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকল্প, অভিলক্ষ্য, উদ্দেশ্য, শ্লোগান এবং গবেষণা নীতি ও কৌশল।
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রাজস্ব বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে ১৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এর আগে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে। যার সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ছিলো ১৩৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষা, গবেষণা ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই বাজেট বরাদ্দের হার প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে।
উপাচার্যের পদক্ষেপে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এসেছে গতিশীলতা। বিশেষ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে থেকে আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলা প্রণয়ন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে একাডেমিক ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করে পাঠদান শুরু হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ডি-নথির (ডিজিটাল নথি) যুগেও প্রবেশ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে ডি-নথির আওতায় আনার চেষ্টাও চলছে। ডি-নথির বিষয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারারসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুবির আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে পর্যায়ক্রমে পুরোপুরি অটোমেশনে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়ন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনে ভর্তি কার্যক্রম, আইকিউএসির মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ৫২টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আইকিউএসির মাধ্যমে ৩১টি প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়, যাতে ২ হাজার ৭১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নিয়েছেন। এতদাঞ্চলের গবেষকদের গবেষণা কাজের সুবিধার্থে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অত্যাধুনিকমানের ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই এটি উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া এই মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় একটি ইনোভেশন হাব তৈরির কাজও চলমান রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেখানে ক্যাম্পাসের আবর্জনা দিয়েই তৈরি হবে কম্পোস্ট সার, বিক্রিও করা হবে। খুবিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা থেকে বছরে উৎপাদিত হবে ৭৫ কিলোওয়াট গ্রিন এনার্জি, মেয়াদকালে হ্রাস পারে সাড়ে ১৬শ’ টন কার্বন নিঃসরণ। টেনসাইল মেমব্রেন স্ট্রাকচার প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে খুলনাঞ্চলের প্রথম বৃহদাকার উন্মুক্ত ছাদ।
উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব গবেষণা তহবিল গঠনের আহ্বান জানানোর পর তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রিসার্চ ইনডোমেন্ট ফান্ড গঠন করেছেন। উপাচার্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ ফান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকা অনুুদান প্রদান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ৮০০টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ এবং ১১০টি বেশি গবেষণা প্রকল্প শেষ হয়েছে। একই বছরে পিএইচডি প্রোগ্রামে রেকর্ডসংখ্যক ৮৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গত দুই বছরে ৪ কোটি টাকারও বেশি অনুদান হয়েছে। যার মধ্যে গত এক বছরে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা গবেষণা অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষককে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে পাঁচ প্রজাতির উপকারী পোকার দ্রুত উৎপাদন ও বংশবিস্তার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকরা। ক্ষেতে এসব উপকারী পোকা ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে একদিকে কৃষকের খরচ কমবে, বাড়বে ফসলের পুষ্টিগুণও।
দুই বছর মেয়াদ পূর্তির প্রাক্কালে উপাচার্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন পূরণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে নানামুখী উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি গত দুই বছরে তাঁর কর্মমেয়াদে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তথা মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, ইউজিসির চেয়ারম্যান, সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাটিউটরি বডির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনীতিক, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতেও তাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।