
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে মাঠ চষেবেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা ৪শ্যামনগর সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ না থাকলে শক্ত অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলাম। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও থেমে নেই রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ দলের কেন্দ্র ও হাইকমান্ডে জোর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সাতক্ষীরা-০৪ সংসদীয় আসন শ্যামনগরের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভেতরে ভেতরে ভোটের মাঠ গোছাতে নেমে পড়েছেন।
দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক জনমত গঠন ও সমর্থন বাড়াতে নানা কৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য জাতীয় দিবস সামনে এলেই সব দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোট চেয়ে ব্যানার ফেস্টুন প্রচার করে চলেছেন।থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও।
এদিকে নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাতক্ষীরা-০৪ আসনের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এখনো সামনে আনতে পারেনি।
এদিকে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের শ্যামনগরের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সর্বসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানান আলাপ। বিশেষ করে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের শ্যামনগরের সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে।
সাধারণ ভোটারদের কথা, বিগত দুই যুগে দেশে বারবার ভোট হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও মানবিক সমাজের তেমন উন্নতি ঘটেনি।
ভোটারদের ভাবনা, এবার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশকে নতুন করে সাজানোর সুযোগ এসেছে। পেশীশক্তির ব্যবহার রোধ, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিরসনে আসন্ন নির্বাচনে নিরব ভোট বিপ্লবের ইঙ্গিত সাধারণ ভোটারদের।
তারা বলছেন, সামাজিক কারণে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সামনে চুপচাপ থাকলেও ভোটের দিন নিরবে পছন্দের যোগ্য, মেধাবী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই তারা বেছে নেবেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬। এ আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির অন্তত পাঁচজন হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
মনোনয়ন কিনতে চান কয়েকজন তরুণ নেতাও। বিপরীতে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াত সাতক্ষীরা-৪ আসনে শ্যামনগরে লড়বেন একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম। মাঠে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা আল মামুন(হাজী মনির) কে।
সাতক্ষীরা -০৪ আসনে শ্যামনগরে বিএনপির একাধিক হাই প্রোফাইল সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন।এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলীয় কর্মসূচি পালনেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটের মাঠের হিসাব নিকাশ কষছেন। নিজ নিজ প্রভাব ও অবস্থান জানান দিতে চলছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন। এমনকি তাদের সমর্থকরা একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন।
ভোটের মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না বলেন, আমরা সাতক্ষীরা-৪ আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই। এজন্য তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী জানান, তিনি সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনকে সামনে রেখে এগুচ্ছেন। কেন্দ্রের সিগন্যাল পেলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।
শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শ্যামনগরে বিএনপির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আমি দলের সাথে আছি। নেতৃত্ব দিচ্ছি। উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করেছি। আগে আমাদের শ্যামনগরে বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং ছিল না। যখন জেলা কমিটির নেতৃত্বে ইফতেখার আলী ও তারিকুল হাসান আসলো, তখন থেকেই গ্রুপিং শুরু। এই গ্রুপিংটা মূলত সাতক্ষীরা কেন্দ্রিক। তবে, আমি মনোনয়ন পেলে কোনো গ্রুপিং থাকবে না।
দলীয় মনোনয়ন ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে তৃণমূলে গণসংযোগ বৃদ্ধি, দলকে সুসংগঠিত করা, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির নির্দেশ দেন এবং প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমি সে অনুযায়ী কাজ করছি।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা থাকে, তাদেরকে কেন্দ্র করে একটি বলয় গড়ে ওঠে। এটা মনোনয়ন কেন্দ্রিক। দল যখন চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, এই দূরত্ব কমে আসবে। ইতোমধ্যে দূরত্ব কমে আসতে শুরু করেছে। যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন আমাদের সবারই লক্ষ্য ধানের শীষকে জয়যুক্ত
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেব।
আমি শ্যামনগর কালিগঞ্জের মানুষের সাথে সবসময় ছিলাম, থাকবো।এ আসনে ভোটের মাঠে লড়বেন গণসংহতি আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার সংগঠক আলফাত হোসেন। ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলাজুড়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন।
নিজস্ব দলীয় কর্মী বাহিনীসহ নিজের স্বচ্ছ ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে যেতে চান তিনি। সাধারণ ভোটারদের কাছেও মোঃ আলফাত হোসেনের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তিনি বলেন পরিবর্তন সম্ভব,পরিবর্তন চাই, এই স্লোগানকে বিশ্বাস করি ও উপকূলীয় অঞ্চলের লাঞ্ছিত -বঞ্চিত, অসহায় দারিদ্র্য মানুষের সেবার লক্ষ্যে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য।
শক্ত অবস্থায় জামায়াত ঃনির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও জামায়াতের এ নেতা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।তবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না সদ্য গঠিত এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সাতক্ষীরা-৪ আসনে তেমন কোনো প্রার্থীর নাম ও শোনা যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরা-০৪: এ আসনটি সাতক্ষীরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সাতক্ষীরার বৃহত্তর উপজেলা হওয়ায় সব দলই এ আসনটিকে নিজেদের ডেরায় রাখতে চায়। এ আসনে বিগত দিনে আওয়ামীলীগের এক চেটিয়া আধিপত্য ছিল। তবে বিগত ১৬ বছরে বিতর্কিত একাধিক নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন জামায়েত-বিএনপির তৃণমূল সমর্থকরা। এবার তারা ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, তারা আবার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
তবে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে । সে ক্ষেত্রে বিএনপি ও গণসংহতি আন্দোলনের একাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠে সক্রিয় হলে জামায়াত এ আসনটি দখলে নিতে পারবে না বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
ভোটারদের ভাবনা:
সাতক্ষীরা-০৪ আসনের সংসদীয় আসনের শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন এ প্রতিবেদক।
ভোটাররা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। চাপে পড়ে, ভয়ভীতির কারণে স্থানীয় নির্বাচনে জোর করে ভোটারদের নিয়ে যাওয়া হতো। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তারা এবার নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চান।
ভোটাররা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে বলে তাদের বিশ্বাস। ভোটাররা আগামী নির্বাচনে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে ক্লিন ইমেজের সৎ, যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের ভোট দিতে চান।
ভোটাররা পেশীশক্তি প্রদর্শনকারী, ভয়ভীতি দেখানো, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রভাবশালী প্রার্থীদের ভোটের মাধ্যমেই জবাব দিতে চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোটাররা বলেন, ভোটের সামনে অনেকেই সামাজিক নেতাদের ম্যানেজ করে ভোট সংগ্রহ করেন। এতে করে বিগত দিনগুলোতে কেবল ভোটের পরে ভোট হয়েছে। নেতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দেশের ও সমাজের কোনো বাস্তবিক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি।
আগামী নির্বাচনে ব্যালটেই চিহ্নিত অসৎ নেতাদের জবাব দেবেন তারা।
নিউজটি শেয়ার করুন
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা অনুযায়ী পূর্বের রূপে ফিরেছে সাতক্ষীরা-৪ আসন (শ্যামনগর, তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫)। ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬ ভোটার নিয়ে গঠিত আসনটিতে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অনেকের জন্য হতাশারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি শিবিরের চরম হতাশা বিরাজ করলেও স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বর্তমানে মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ। চোখে পড়ছে না জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রমও। এ সুযোগে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আসনটিতে একবারও জিততে না পারা বিএনপিও চায় প্রথমবারের মতো জিতে আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এলে বদলে যেতে পারে সমীকরণ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচটি সংসদীয় আসন ছিল। এক্ষেত্রে জেলার শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে ছিল সাতক্ষীরা-৫ আসন। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা জেলা থেকে একটি আসন কমিয়ে চারটি আসন করা হয়। যেখানে শ্যামনগরের সঙ্গে কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় সাতক্ষীরা-৪ আসন। এভাবেই চলেছে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। সম্প্রতি আবারো সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে সাতক্ষীরা-৪ আসন।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনতা পরবর্তী ১৩টি নির্বাচনের, আমি, ডামি, নৈশ্য ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৭টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে জান জামায়াতের প্রার্থী। জাতীয় পার্টি একবার এবং মুসলিম লীগ প্রার্থী একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
সংসদীয় আসনের এ ভাঙা-গড়ার খেলায় এ আসনে কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শ্যামনগর থেকে, কখনো কালিগঞ্জ থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন শ্যামনগর-কালিগঞ্জ ধরে, কিন্তু আকস্মিক সীমানা পরিবর্তন হওয়ায় কালিগঞ্জ অংশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পড়েছেন বিপাকে, যা তাদের জন্য অস্বস্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে শ্যামনগর অংশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রয়েছেন স্বস্তিতে।
শ্যামনগরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র অনুযায়ী কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, প্রচারণা ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত একক প্রার্থী ও সাবেক এমপি (সংসদ সদস্য) গাজী নজরুল ইসলামের নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করেছে দলটি। একইভাবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় তৃণমূলে গণসংযোগের পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ এবং শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না। এ তালিকায় আরও রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী। তবে কাজী আলাউদ্দিন ও এডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী পড়েছেন আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসজনিত জটিলতায়। আর বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শ্যামনগরে অবস্থানগত কারণে সুবিধাজনক স্থানে থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করতে না পারলে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জয় অর্জন করা অসাধ্য হয়ে পড়বে বিএনপির জন্য। যদিও দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না। এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের একাংশ) আসনের সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি কলঙ্কজনক দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত নোঙর প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা পান ৩৮ হাজার ৮৮ ভোট।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদে নৈশ্য ভোটের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এসএম জগলুল হায়দার। তার নিকটতম জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ৪৮৬ ভোট।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জামায়াত জোট ছাড়ায় বেশিরভাগ দলের ভোট বর্জনের পর অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এসএম জগলুল হায়দার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
সব দলের অংশগ্রহণে জোটগতভাবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৫ ভোট।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমি একসময় কালিগঞ্জ-দেবহাটা আসনের এমপি ছিলাম। এখন নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা অনুযায়ী দেবহাটা পড়েছে সাতক্ষীরা-২ আসনের (সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা) মধ্যে, আর কালিগঞ্জ পড়েছে সাতক্ষীরা-৩ আসনের (কালিগঞ্জ-আশাশুনি) মধ্যে। আমি বিগত ১৫ বছর কাজ করেছি শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে। এখনো শ্যামনগর ও কালিগঞ্জেই কাজ করছি, প্রতিদিন দুই উপজেলাতেই একাধিক প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছি। দুই আসনের নেতাকর্মীরাই আমাকে চাচ্ছে, তারা বলছে, আমাদের ছেড়ে যেয়েন না। এমন পরিস্থিতিতে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলীয় হাই কমান্ডের সিগন্যালের অপেক্ষায় আছি।
অন্যদিকে স্বস্তিতে থাকা জামায়াতের একক প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম জানান, আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে আমারা আমীরে জামায়াতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। ভোটাররা আমাদের আশ্বস্ত করছেন। এতেই আমরা সন্তুষ্টি। আশা করছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে জনগণ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। তবে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে আসতে পারে তাহলে পাল্টে যাবে সাতক্ষীরা ৪ শ্যামনগর আসনের নির্বাচনের সমীকরণ কারণে এই আসনটি ১৯৯০ দশক থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি ভাবে শাসনতন্ত্র চালিয়ে আসছে।

