বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, সর্বোচ্চ শাস্তি কোটি টাকা জরিমানা এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ গত বুধবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা রেখেই পাস এই বিলে কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপুল সম্প্রসারণের এই যুগে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করি না। তবে নতুন আইনের অপব্যবহার থেকে মুক্তি মিলবে কি- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রদ করে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্যোগ নেয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। পরে কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে তাদের প্রতিবেদন সংসদে জমা দেয়। আইনটির খসড়া প্রকাশের পর থেকেই মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও কার্যত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল বিষয়বস্তু বহাল রাখা হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতোই এই আইন। সরকার গত ৭ আগস্ট জানায়, তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রূপান্তর এবং আধুনিকায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার নাম হবে সাইবার নিরাপত্তা আইন। যেখানে বিদ্যমান আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হবে। গত ২৮ আগস্ট মন্ত্রিসভা এই বিলের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করে। সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে বহুবার আইনটি সংশোধনের আশ্বাস দিলেও কালক্ষেপণ হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি জাতীয় সংসদে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হয়। তখন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং মানবাধিকার সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে, এই আইনের এমন কিছু ধারা আছে, যা বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয় এবং ২৫ ও ২৯-সহ চিহ্নিত ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয় আইনের কোনো অপব্যবহার হবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই আইনটি একটি খড়গে পরিণত হয়। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রচলিত ব্যবস্থায় এসব অপরাধ যেমন রোধ করা যাচ্ছে না, তেমনি প্রচলিত আইনেও এসব অপরাধের বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সময়োপযোগী আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ (মিথ্যা বা আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ), ধারা ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ) এবং ধারা ৩১ (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর শাস্তি) সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় অবিকৃত রয়েছে। ২৫ ধারায় ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন’ সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় এর অপব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে আইন করা হয়। সাংবাদিক সমাজসহ অনেকের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আইনটি পরিবর্তনের। সে দাবি কি পূরণ হয়েছে? সংশোধিত নতুন আইনে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের অধিকার ও কর্মপরিবেশ কি সহায়ক হবে- এমন প্রশ্ন আবারো উঠছে।