
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : “ক্যানসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে করসলের পাতা” এই তথ্য চাউর হওয়ার পর করসলের পাতা নিতে সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকায় গাজী আলী আশরাফের বাড়িতে ভিড় করছেন শত-শত মানুষ। সেই সাথে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠেছে। আলোচনা-সমালোচনায় সাতক্ষীরায় অনেকটা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে ‘করসল’।
এদিকে প্রথমে আগতদের সাধ্যমত করসল পাতা দিয়ে উপকার করতে পারলেও এখন অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন গাজী আলী আশরাফ। কারণ তার করসল গাছগুলো থেকে পাতা ছিড়তে ছিড়তে এক প্রকার ‘ন্যাড়া’ হয়ে গেছে। একইভাবে শত-শত মানুসকে পরামর্শ দেওয়া ও সংবাদ কর্মীদের সময় দিতে গিয়ে বিশ্রামহীন হয়ে পড়েছেন গাজী আলী আশরাফ।
চুয়াডাঙ্গা থেকে গাজী আলী আশরাফের বাড়িতে আসেন হাসানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে করসলের পাতা নিতে এসেছি। গাজী আলী আশরাফের সাথে কথা হয়েছে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। আমার বাবার ক্যান্সার। দেখি করসলের পাতার রসে কোনো উপকার পাই কি না।
গাজী আলী আশরাফ বলেন, খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অনেকে ফেসবুকে তর্ক-বিতর্ক করছে। কেউ কেউ অন্যান্য গাছ-গাছড়ার সাথে তুলনা করছে। কিন্তু আমি প্রথমেই যখন একজন সংবাদ কর্মীর সাথে কথা বলেছিলাম, তখনই করসল গাছ নিয়ে আমার এক্সপেরিমেন্ট এবং অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে এটা নিয়ে বৃহৎ আকারে গবেষণার কথা বলেছিলাম। আমার দাবি ছিল একটা নিয়মতান্ত্রিক গবেষণায় যদি এর উপকারিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তবে করসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের হাজার হাজার ক্যান্সার রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, সংবাদ কর্মীদের লাইন পড়ছে। আমার সব গাছের পাতা শেষ।
প্রসঙ্গত, করসল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একটি ফল। স্থান বিশেষ টক আতা, লক্ষ্মণ ফল, সায়ারসপ, গ্রাভিওলা বা গায়াবানো নামেও পরিচিত। কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও করসল বা টক আতা গাছের ফল ও পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী বা ক্যান্সারের বিকল্প চিকিৎসা বলে প্রচার রয়েছে। করসল ফলের গা ঘন সবুজ এবং কাঁটাযুক্ত। ডিম্বাকৃতির এই ফল ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং একটি মাঝারি দৃঢ় গঠনবিন্যাস রয়েছে। এগুলির মাংস রসালো, অ্যাসিডিক, সাদাটে এবং সুগন্ধযুক্ত। ফলটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১ এবং ভিটামিন বি ২ রয়েছে।
এই করসল বা টক আতা গাছ নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের গাজী আলী আশরাফ। ২০১২ সালে থাইল্যান্ড থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে ৭টি চারা তৈরি করেছিলেন গাজী আলী আশরাফ। এর মধ্যে ৬টি ফলবান করসল গাঁছ এখনো বেঁচে আছে। নিজের লাগানো করসল বা টক আতা গাছ থেকে দীর্ঘ সাত বছর পর প্রথমবার ফল পান তিনি। যার একটির ওজন হয়েছিল এক কেজি ২৭ গ্রাম। গায়ে কাটাযুক্ত করসল ফলের ভেতরটা অনেকটা আতার মতোই। স্বাদও অনন্য।