সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: সংকটকালে খাদ্য ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার। এ বছর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৫১ হাজার ৯৭৩ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর মধ্যে পাঁচ জেলায় সংগ্রহ হয়েছে ১ শতাংশ। তবে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল থেকে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা অঞ্চলে এ বছর আমন ফসল ভালো হয়েছে। হাটবাজারে বেচাকেনাও ছিল ভালো। এবার সিদ্ধ ও আতপ চাল কেনা কিছুটা সন্তোষজনক। সিদ্ধ চাল সংগ্রহের হার শতকরা ৮৭ শতাংশ। আতপ চাল সংগ্রহের হার ৭০ শতাংশ। তবে চাল সরবরাহে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় মিল মালিকদের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, বিভাগের ৩৭ শতাংশের বেশি মিল মালিক চাল সরবরাহ করেননি। বিভাগে ১ হাজার ১৬০টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েও চাল সরবরাহ করেনি ৪৮টি মিল। এছাড়া চুক্তির বাইরে ছিল ৩৮৩টি মিল। এসব মিলের লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অবশ্য খুলনা রাইস মিল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজার দামের থেকে অনেক কম। সরকারকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাস্তবতার নিরিখে দাম নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে কৃষক ও মিল মালিকদের ভর্তুকি দিতে হবে। অন্যথায় মিল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।’
চালের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম হলেও পুরোপুরি ভাটা পড়েছে ধান সংগ্রহে। অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘মার্চে আমন ধান ও চাল কেনার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সিদ্ধ ও আতপ চাল কেনা কিছুটা সন্তোষজনক হলেও ধান সেভাবে কেনা যায়নি।’
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ‘সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজারদরের থেকে অনেক কম। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধান বিক্রিতে কৃষকদের সেভাবে আগ্রহী করে তোলা যায়নি। এছাড়া সরকারি ধান-চাল কেনায় দীর্ঘসূত্রতা, মান নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের বিক্রির টাকা পেতে দেরি হওয়াসহ বেশকিছু কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করা হলেও লক্ষ্য অর্জনে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধান-চাল সংগ্রহ ব্যবস্থা সহজ করা, কৃষকের অর্থ দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। স্থানীয় মিল মালিকদের আরো কার্যকরভাবে সংযুক্ত করা এবং আঞ্চলিক কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৫১ হাজার ৯৭৩ টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৩৬৯ টন। এর মধ্যে
খুলনা জেলায় ৬ হাজার ৩৬ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৩ টন।
যশোরে ৯ হাজার ৭১৯ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ২২ দশমিক ৪০০ টন।
চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৭০১ টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৪০ টন।
মেহেরপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৪১ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ২১৭ টন।
কুষ্টিয়ায় ৬ হাজার ৭২০ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৪৭ টন এবং
বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি।
এছাড়া বিভাগে সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৩৩৫ টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৬৯ টন। অর্থাৎ সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ। এর মধ্যে খুলনায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৮ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৭ হাজার ৬১৯ টন। বাগেরহাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩০৪ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৫২ দশমিক ৬৮০ টন।
সাতক্ষীরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫৬০ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ১২০ টন।
যশোরে ১৪ হাজার ২৪৭ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৭ দশমিক ৩৭০ টন।
ঝিনাইদহে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ১৪৫ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ১৯৪ টন।
মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪৭২ টন। সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৫৫৩ টন।
নড়াইলে ১ হাজার ৯১৩ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ টন।
কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ১৯৭ টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৭ হাজার ৮৬ টন।
চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৯৪ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৯ টন।
এছাড়া মেহেরপুরে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৫ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ৬৫২ দশমিক ২৩৯ টন।
বিভাগে আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯২৫ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৯৮৪ টন। অর্থাৎ আতপ চাল সংগ্রহের হার লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ।
সাতক্ষীরাসহ খুলনার পাঁচ জেলায় এক কেজি ধানও পায়নি খাদ্য বিভাগ
Leave a comment