
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় একটি ব্রিজ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় দুই উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়ত চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী লাবণ্যবতী খালের ওপর কাঠের ব্রিজের পাটাতন ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ব্রিজের ওপর নজর নেই পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা এলজিইডির। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ব্রিজ তুমি কার?
এলাকাবাসী জানান, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সাতক্ষীরা ও দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী লাবণ্যবতী খালের ওপর কাঠের ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে পাটাতন ভেঙে জনসাধারণের চলাচল মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ছাত্র-ছাত্রীসহ অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় শ্রীরামপুর কলেজ, সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কুলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের ব্রিজটি ব্যবহার করে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম জানান, দুই যুগ ধরে শুনছি শ্রীরামপুর-কুলিয়া গ্রামকে একত্রিত করা কাঠের ব্রিজটি ঠিক করা হবে। এখনও ঠিক হলো না। আমি জানি না আমার জীবদ্দশায় ব্রিজটি ঠিক দেখে যেতে পারব কি না? তবে আশায় আছি। তিনি আরও বলেন, এ ব্রিজ দিয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। কিন্তু ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় তাদের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে। ব্রিজটি নতুনভাবে নির্মাণ করে জনগণের যাতায়াতব্যবস্থা নিরাপদ করার দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারে ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়ায় বাড়ি হলেও আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সদর উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারে। আমার দিন-রাত সবসময় আসা-যাওয়ার একমাত্র পথ এই ব্রিজ। কিন্তু এটি ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তার দাবি। শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলে আসা-যাওয়ার ব্রিজটি অনেক দিন হলো ভেঙে গেছে। এখনও কেউ ঠিক করে দেয়নি। ব্রিজ পার হতে আমাদের ভয় লাগে। আমরা একটা ভালো ব্রিজ চাই।
স্থানীয় ভোমরা ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নেছার উল্লাহ বলেন, এ ব্রিজটি কারা করবে, সাতক্ষীরা সদর না দেবহাটা এলজিইডি নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ড তা কেউ জানে না। ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময় ব্রিজটি মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদারকির অভাবে ব্রিজটি আবারও ভেঙে পড়েছে। জরাজীর্ণ ব্রিজের দুই ধারে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে জনগণের পথ আটকানো থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে লাবণ্যবতী খালের দুই ধারের বাসিন্দারা।
তিনি বলেন, লাবণ্যবতী খালের ওপর নির্মিত কাঠের ব্রিজটি পুনরায় আধুনিক অবকাঠামো দিয়ে নির্মাণ করা হলে দুই উপজেলার শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দাদের পারাপারে অনেক উপকার হবে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্মিত ব্রিজটি সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী মানুষের পারাপারের একমাত্র অবলম্বন। ২০০০ সালের বন্যায় ব্রিজটির মারাত্মক ক্ষতি হয়। সে সময় সেটি সেটি সংস্কার করা হয়। এরপর দুই যুগেও এটি আর সংস্কার করা হয়নি।

