সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আসন্ন এই পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে সাতক্ষীরার পশুর হাটগুলো। কোরবানি উপলক্ষে পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত দিয়ে যেন কোনোভাবেই ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবির পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া খামারিরা এবার গরু মোটা-তাজাকরণে ওষুধ প্রয়োগ থেকেও বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।সাতক্ষীরায় সব চেয়ে বড় পশুর হাট বসে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায় বাজারে। দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট বসে সদর উপজেলার আবাদের হাটে। সপ্তাহে একদিন রোববার পারুলিয়ার হাট বসলেও সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদেরহাটে পশু কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া শ্যামনগর, ধুলিহর, কলারোয়া ও তালাসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পশুর হাট বসে। এইসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও ঈদের দুই থেকে তিনদিন আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ পশুর হাট বসবে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও বিক্রি কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। তবে হাটগুলোতে মাঝারি সাইজের গুরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশি আগ্রহী নয়।সরজমিন দেখা গেছে, দেবহাটার পারুলিয়া পশুহাটে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এদিকে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার এবং বড় সাইজের খাসি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ২য় বৃহত্তর পশুর হাট আবাদের হাটেও একই চিত্র চোখে পড়েছে।স্থানীয় খামারিরা বলছেন, এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচাঘাস, খৈল, চিটাগুড়, বিচলী, ভুষি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। আরও বলেন, কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে, কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে।সদরের তালতলা এলাকার গরু খামারি মো. আব্দুল কাদের জানান, আমি ৩০ বছর ধরে গরু পালন করি, এবারের কোরবানি উপলক্ষে ৬০টা দেশি ষাঁড় পালন করেছি। তিনি বলেন, আমার খামারে ৭০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সব সাইজের দেশি গরু আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতার উপস্থিত কম।পারুলিয়ায় পশু কিনতে আসা দেবহাটার আ. আলিম বলেন, ২ ঘণ্টা ধরে ঘুরছি কিন্তু দরদাম ঠিক না হওয়ায় পশু কিনতে পারছি না। এবার দাম অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি খামার ও পশুর হাট ঘুরেছি গরু কেনার জন্য কিন্তু এখনো কিনতে পারিনি।আবাদের হাটে আসা ক্রেতা ফারুক বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা দেশি গরুর দাম একটু বেশি হাঁকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সে তুলনায় বিক্রি কম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি। সেইসঙ্গে ছাগলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি।এ বিষয়ে হাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান হবি বলেন, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদের হাট বসে। আজ হাটের দিন ছিল, মোটামুটি কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে আগামী মঙ্গলবার হাট আরও বড় হবে।এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২৯ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হাওয়ায় খামারিরা ঘাসের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। ঘাস পাঁচ থেকে সাত টাকা কেজি এবং দানাদার জাতীয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ঘাসের ওপর মোটামুটি ৭০ শতাংশ কৃষক নির্ভরশীল হয়ে গেছে। ফলে গতবারে যেমন বাজার স্বাভাবিক ছিল, অনুরূপভাবে এবারো স্বাভাবিক থাকবে।জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জেলায় খামারি রয়েছে ১২ হাজার ৮৮৯ জন। এসব খামারিদের কাছে এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮টি পশু। তবে জেলার চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৭৭টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৪৫ হাজার ২৬৫টি, মহিষ ৭৩৭টি, ছাগল ৭৬ হাজার ৫৯২টি ও ভেড়া রয়েছে ৬ হাজার ৩১১টি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। আসন্ন ঈদুল আযহা কে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জমে উঠেছে দেবহাটার পারুলিয়ায় সাতক্ষীরা জেলার সর্ব বৃহৎ গরুর হাট। কিন্তু ভারত থেকে আসা গরুর পরিমান কমে যাওয়ায় তুলনামূলোক ভাবে বেড়ে গিয়েছে দেশী গরুর মূল্য। আর এজন্য গত বারের থেকে এবার চাহিদাও কমে গিয়েছে বড় গরুর।
তুলনামূলোকভাবে মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমান গরু সহ বিক্রেতারা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও ক্রেতার সংখ্যা ছিলো খুবই কম। তবে যে সকল ক্রেতারা গরু কিনতে এসেছিলো তাদের অধিকাংশেরই নজর ও বাজেট দুটিই ছিলো মাঝারি আকারের গরুর দিকে। দেবহাটার পারুলিয়া গরুহাটে খুব সহজেই দেখা যায় এই চিত্র। তাছাড়া গরুর মূল্য বেশী হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত শ্রেনীর মানুষের মধ্যে বিপরীত উপায় হিসেবে ছিলো ছাগল কেনার ব্যাপক আগ্রহ। জেলার সর্ব বৃহৎ গরুর হাট পারুলিয়ায় মাঝারি গরু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং বড় আকারের গরু বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গরু বিক্রেতা ও মালিকরা জানায়,ভারত থেকে গরু আসা সম্প্রতি কমে যাওয়ায় দেশী গরুর দাম বাড়লেও সেই দামের সাথে ক্রেতা বা ব্যবসায়ীদের স্বমন্বয় না হওয়ায় গত বারের থেকে এবার বিক্রি হচ্ছে কম। ফলে মাঝারি গরুর দিকে ঝুকছে ক্রেতারা।
অপরদিকে, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু কিনতে এই হাটে আসা কয়েকজন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানায়, অন্যান্য বারের থেকে এবছর তুলনামূলোকভাবে বেড়েছে দেশীয় গরুর দাম। ফলে ইচ্ছে থাকলেও দামের দিক বিবেচনায় গরু কিনতে পারছেন না তারা। আর এজন্য তারা সম্প্রতি এই এলাকা দিয়ে ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন।
কোরবানির ঈদ আসন্ন। ভারতীয় গরু এবার দখল করতে পারেনি সাতক্ষীরার বাজার। দেশী গরুর দখলে জেলার প্রত্যেকটি পশুর হাট। তাই জমে উঠেছে পশু হাটগুলো। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রত্যেকটি হাটে। ক্রেতা-বিক্রেতার মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে হাটগুলো।
জেলা পশুহাটগুলোর মধ্যে অন্যতম দেবহাটার পারুলিয়া, সদরের আবাদের হাট, আশাশুনির বুধহাটা, তালার পাটকেলঘাটা, কলারোয়া পৌর বলফিল্ডসহ বিভিন্ন হাট এখন কোরবানির পশু ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত। শেষ মুহূর্তে এসব হাট ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ক্লাবের মাঠে বসছে পশুর হাট।
দেবহাটার পারুলিয়া বাজার কমিটির ইজারাগ্রহণকারী ও জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা আলফেরদাউস আলফা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের বৃহৎ পশু কেনাবেচার স্থান দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার গরুহাট। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ হাট। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ও জেলার বাইরে থেকে খামারিরা তাদের পালিত পশু বিক্রয় করতে আসে এই হাটে। হাটের পরিবেশ ক্রেতা ও বিক্রেতা বান্ধব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। হাটে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পশু বিক্রয় হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
গরু বিক্রেতারা জানান, জেলার অন্য পশুরহাটগুলোতে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি পশু আসছে। তবে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে গরু না আসায় দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান ক্রেতারা। হাটে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত গরু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা দামের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। ৪০-৫৫ হাজার টাকার মধ্যেও বেশকিছু গরু বিক্রি হচ্ছে। খাসি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। তবে ৬-৮ হাজার টাকা দামের ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
পারুলিয়া হাটের ইজারা গ্রহণকারী ও জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা জানান, ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর সমাগম বেশি। তাছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে কোন প্রকার চুরি, ছিনতাই না ঘটে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম থাকায় স্বস্তি ফিরেছে।
আশাশুনির বুধহাটা থেকে আব্দুর রব জানান, সেখানেও ২৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ছাগল ও ভেড়াও উঠছে হাটে। তালার পাটকেলঘাটা থেকে মাস্টার মুজিবুর রহমান জানান, নানা শ্রেণির ক্রেতা-বিক্রেতার পদভারে মুখরিত পাটকেলঘাটা পশুর হাট। কেনা-বেচা ভাল।