
সাতক্ষীরা প্রতিদিন : কপোতাক্ষ নদের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে চারটি অসম্পূর্ণ কংক্রিটের পিলার। পাশে ছড়িয়ে রয়েছে বালু-খোয়ার স্তূপ, অনেক জায়গায় জন্মেছে আগাছা। নেই শ্রমিক, নেই যন্ত্রপাতি। পাঁচ বছর ধরে চলমান শালিখা ব্রিজের কাজ এভাবেই থমকে আছে। কোটি টাকার প্রকল্পটি টাকার সংকটে আটকে, নাকি সরকারের তদারকির ব্যর্থতায় অচল এখন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়ন ও খুলনার পাইকগাছার লাড়ুলি ইউনিয়নকে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), পাইকগাছা। ৮০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ ও ৪৪ মিটার ভায়াডাক্টসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। দায়িত্ব পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জিয়াউল ট্রেডার্স’। শুরুতে কিছু পিলার নির্মাণ হলেও এর পর কাজ আর এগোয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। মাছ, পাট, শাকসবজি ও কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে পার হন। ভারী বোঝা ওঠাতে গিয়ে সাঁকো কেঁপে উঠলে অনেকে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন। এতে কৃষকের পণ্য সময়মতো বাজারে পৌঁছায় না।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরের দিন থেকেই শ্রমিকরা কাজ ফেলে চলে যান। পরে রাতের আঁধারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব যন্ত্রাংশ সরিয়ে নেয়। ফলে নদীর দুই পাড়ে পড়ে থাকে শুধু অসম্পূর্ণ পিলার আর ভাঙা যন্ত্রাংশ।
কাটিপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজ হলে এলাকার উন্নয়ন হতো। কিন্তু কাজ ফেলে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় আবারও হতাশ হয়েছি।’ অটোরিকশা চালক কবির মোল্লা বলেন, ‘এই যুগেও নদী পার হতে হচ্ছে বাঁশের সাঁকোতে। ব্রিজ থাকলে কয়রা, পাইকগাছা আর আশাশুনি থেকে মানুষ সহজে খুলনা ও সাতক্ষীরায় যেতে পারত।’
খেশরার একাধিক ব্যবসায়ী ও চাষি বলেন, ‘ব্রিজটা হলে পাইকগাছা ও তালা থেকে মালপত্র সহজে খুলনায় যেত। এখন বাঁশের সাঁকোতে পণ্য টানতে গিয়ে সময় বেশি লাগে, পরিবহন খরচও দ্বিগুণ হচ্ছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা বা চাষ করতে গিয়ে শুধু ক্ষতি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব জানান, ঠিকাদারকে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু না করায় তার বিরুদ্ধে বাতিলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে। অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবুল হোসেন দাবি করেন, ‘৫ আগস্টের পর শ্রমিকরা বাড়ি চলে গেছেন। বকেয়া পাওনা ও বিলসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ আছে। সমস্যা সমাধান হলে আবার কাজ শুরু হবে।’

