প্রায় আট মাস পর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন সর্বশেষ নির্বাচিত বৈধ কমিটির নেতৃবৃন্দ। শনিবার বেলা ১টার দিকে আদালত ঘোষিত অবৈধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর রহমান উপস্থিত থেকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শারীরিক সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন নির্বাচিত
কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপির নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে। এ সময় সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের এডিশনাল এসপি মির্জা সালাউদ্দিন, সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো: আসাদুজ্জামানসহ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব হতে প্রেরিত এক ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়, এর আগে আদালত ঘোষিত অবৈধ কমিটির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করা হয়। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে সকাল ৮টা থেকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের জানমাল সহায়-সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী বৈধ সদস্য ছাড়া অন্যদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
এদিকে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বৈধ সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপির নেতৃত্বে ৭৫ জন বৈধ সদস্যের মধ্যে প্রায় ৬০ জন সদস্য সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে। এসময় প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। কিছু সময় পর আদালত ঘোষিত অবৈধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর রহমানসহ তাদের পক্ষীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, শহিদুল ইসলাম, কামরুল হাসান, আবুল কালামসহ ৭/৮ জন প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে। এসময় মোজাফ্ফর রহমান সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের অফিস রুমের তালা খুলে দিয়ে বৈধ কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে সেখানে বসান। কিন্তু অফিস রুমে স্থান সংকুলন না হওয়ায় পরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের হলরুমে সকলের বসানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শারীরিক নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন এবং আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে প্রতিশ্রæতি দেন।
এরআগে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিন সাতক্ষীরা সদর সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা দেওয়ানী ২৩/২০২০ মামলায় গত ৭ সেপ্টম্বর তারিখে ঘোষিত আদেশ পড়ে শোনান। ঐ আদেশে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেসক্লাবের শারীরিক ও আর্থিকসহ সকল দায় দায়িত্ব আবু আহমেদ ও মমতাজ আহমেদ বাপির নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে হস্তান্তরের জন্য বলা হয়। আদেশে গত ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের পর থেকে প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর পর্যন্ত সকল প্রকার অনিয়মিত আর্থিক লেনদেনের জন্য জিএম নুর ইসলাম ও মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়ী থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের এক মাসের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় অনুমোদিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যকরি কমিটি গঠনের লক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আবু-বাপির নেতৃত্বাধীন বৈধ কমিটির প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যর্থতায় কার্যকরি কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সেক্ষেত্রে সাধারণ পরিষদের সদস্যগণ নির্বাচনের লক্ষে গঠণতন্ত্র অনুযায়ী সভা আহবান করে কোরাম পূর্ণ সাপেক্ষে নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় ৬ ফেব্রæয়ারি ২০২০ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনী তপশীল ঘোষণা করা হয়। এলক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র বিক্রির পূর্বেই ২২ জানুয়ারি জিএম নুর ইসলাম ও মোজাফ্ফর রহমানের নেতৃত্ব সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব দখল করা হয়। তারা কোনরকম বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই একটি মনগড়া কমিটি ঘোষণা করে এবং প্রেসক্লাব দখল করে নেয়। এর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ আবু আহমেদসহ অন্যান্যরা বাদী হয়ে গত ৩ ফেব্রæয়ারী ২০২০ তারিখ সাতক্ষীরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ২৩/২০২০ মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় বাদী পক্ষের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই রায় প্রদান করেন। খবর বিজ্ঞপ্তি