
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সুন্দরবনের অবলা জন্তু হরিণ বাঘ কুমিরের আক্রমণ উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে সুন্দরবনে বসবাস করছে কিন্তু রেহাই পাচ্ছে না শিকারীদের হাত থেকে । প্রতিনিয়ত খবর আসছে সুন্দরবন এ হরিণ শিকারের। যারা এই সমস্ত মায়াবী অবলা জন্তু হরিণ শিকার করছে তারা স্বাভাবিকভাবে নরপশু । এই নরপশুদের হৃদয়ে দয়ামায়া বলতে কিছুই নেই তাই যদি থাকতো ওই মায়াবী হরিণগুলোর চোখের দিকে তাকালে কিভাবে এদের স্বীকার করে আর এই স্বীকারকৃত হরিণের মাংস কিভাবে পাচার করে। এদের ভিতর কি মনুষ্যত্ব বলে কিছুই নেই, এরা কি সমাজের মানুষ নাএদেরকে মায়াদায় বলে কিছুই নাই তাই সুন্দরবনের অবলা জন্তু হরিণ গুলো একের পর এক স্বীকার করে চলেছে । সে কারণে এদের সামাজিকভাবে নরপশু বলতে মানুষের বা সমাজের কোন দ্বিধাবোধ নেই ।এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সম্প্রতিসুন্দরবনের ফাঁদ পেতে সমগ্র সুন্দর বনে হরিণ শিকার তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি দিনই সুন্দর বনের কোথাও না কোথাও কোস্টগার্ড, পুলিশ কিম্বা বনকর্মী কর্তৃক জব্দ হচ্ছে মৃত হরিন, হরিনের মাংস ও হরিন মারার ফাঁদ। আবার হরিণ শিকারি মাংসসহ আটক হলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হরিণ শিকারে মেতে উঠে। হরিণের মাংস লোভনীয়। ১ কেজি হরিণের মাংস বিক্রি হয় ৮/৯ শত টাকা দরে। বিশেষ করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের দাকোপ উপজেলার নলিয়ান স্টেশন, কয়রা উপজেলার বানিয়াখালী স্টেশন, কাশিয়াবাদ স্টেশন, কোবাদক স্টেশনের অধিক্ষেত্র এলাকায় এবং শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন, কদম তলা স্টেশন, কৈখালী স্টেশনের অধিক্ষেত্র এলাকায় ফাঁদ দিয়ে হরিন শিকারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন স্টেশন থেকে মাছ ধরার পাশ সংগ্রহ করে হরিন শিকারির সঙ্গবদ্ধ দল জেলেদের ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকারে তৎপর রয়েছে। চোরা শিকারীদের সঙ্গবদ্ধ দলকে এবং হরিণ শিকারে উৎসাহ দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে প্রতিহত করতে না পারলে হরিণ শিকার মহামারি আকার ধারণ করবে। হারিয়ে যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মায়াবী চিত্রা হরিণ
সুন্দরবনেবিশ্বের বৃৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে হরিণের। সুন্দরবনে দর্শনার্থী ও বনসংলগ্ন হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। সুন্দরবনের প্রতিটি কোনায় এখন হরিণ দেখা যায়। হরিণকে প্রায়ই বনের খাল বা নদীর ধারে দল বেঁধে চলাফেরা করতে দেখা যায়। সুন্দরবনে দুটি প্রজাতির হরিণ রয়েছেÑ মায়া ও চিত্রা। তবে চিত্রা হরিণের সংখ্যাই বেশি। এই হরিণ শিকার বন্ধ করার জন্য অভিজ্ঞ মহল শেষমেশ নিরুপায় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছে,
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ডিসেম্বর ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার। সেই হিসাবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় পদ্ধতিতে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথাসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করে পাচার করে চোরা শিকারিরা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে এজেন্ট-ব্যবসায়ীদের। এই এজেন্টদের মাধ্যমে কখনো অগ্রিম অর্ডার, আবার কখনো মাংস এনে তারপর বিক্রি করা হয়। এই চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায় হরিণের মাংস।
ক্রেতারাও অনেক সময় প্রতারণা ভেবে হরিণ নিজ চোখে না দেখে মাংস কিনতে চান না। তাই চোরা শিকারিরা জীবন্ত হরিণ লোকালয়ে এনে জবাই করেন। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যায়।
তবে জেলা শহরে প্রতি কেজি হরিণের মাংসের দাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর আস্ত একটি জীবিত হরিণের দাম চাওয়া হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। অবৈধ জেনেও হরিণের মাংস কেনেন মানুষ।
ধনাঢ্য ব্যক্তিরা হরিণের মাংস দিয়ে উৎসব পালন করেন। কেউ কেউ স্বজনদের হরিণের মাংস উপহার দেন। আবার বড় ধরনের স্বার্থসিদ্ধির জন্যও কর্তাব্যক্তিদের খুশি করতে গোপনে হরিণের মাংস সরবরাহ করা হয়। হরিণের চামড়া-শিং শৌখিন ব্যক্তিরা সংগ্রহ করে ড্রইংরুম সাজান।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল সরদার বলেন, উপজেলার একটি ছোট নদী পেরোলেই সুন্দরবনের গহিন জঙ্গল। পেশাদার হরিণ শিকারিরা গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে নাইলনের দড়ির ফাঁদ পেতে রাখেন। চলাচলের সময় হরিণ সেই ফাঁদে আটকে যায়। তারপর বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণের মাংস বিক্রি করা হয়। এক মাস ধরে এলাকায় হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
তবে সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সুন্দরবনে হরিণ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না। এক মাস ধরে কিছু চোরাচালানকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গরু ও খাসির মাংসের তুলনায় হরিণের দাম কম হওয়ায় সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী এলাকায় হরিণের চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরা শিকারিরা চক্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা ও জোড়শিং এলাকায় হরিণ শিকারি চক্রের আধিপত্য বেশি। আর হরিণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বজবজা ও খাসিটানা বন টহল ফাঁড়ি এলাকা।
এছাড়া মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি, হড্ডা, বানিয়াখালী, শেখেরকোনা ও তেঁতুলতলার চর; কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর, ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর কয়রা; উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী, কাঠকাটা; মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব মঠবাড়ী, মঠেরকোনা গ্রামে হরিণ শিকারি চক্রের তৎপরতা রয়েছে।
খুলনার সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘ হত্যা কিছুটা কমলেও একেবারে তা বন্ধ হয়নি। আর বাঘের প্রধান খাবার হরিণ শিকার হচ্ছে প্রায়ই। একই কথা বলছেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাংবাদিক শুভ্র শচীন। এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের ঘড়ি লাল, আংটিহারা, জরসিং ,বেথ কাশি ,কাশি আবার ,গাগরামারি, পারশেমারি ,চাঁদনী মুখা ,হরিশ খালি ,ডুমুরিয়া, পাতাখালি ,দুর্গা পার্টি ,বুড়ি গোয়ালিনী ,দাতিনা খালি, কোয়ালবাড়ি ,মুন্সিগঞ্জ ,মৌখালী, দক্ষিণ কদমতলা, পূর্ব কালিনগর, কুলতলী, মথুরাপুর, ধুম ঘাট, হরিনগর, শিঙর তলি, চুনকুড়ি ,টেংরাখালী, কালেঞ্চে, গোলাখালি ,কৈখালী , ও ভেটখালীএই সমস্ত এলাকা দিয়ে সুন্দরবনের হরিণ নিয়মিত পাচার হয়। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কালিরচর, চোরা মেঘনা ,পুষ্পকাটি, তাল পট্টি, মান্দারবাড়িয়া , বেয়লা কয়লা, ইলশিমারি ,ফিরিঙ্গিয়া ,দারগান , কাছি ঘাটা, ১৮বেকি ,চামটা ,লটাবে কি, চুনকুড়ি ,খবরাখালী, খাসি টানা ,শব্দে, গব্ধে ,চালতে বাড়িয়া ,হাতি ভাঙ্গা, উলুবাড়িয়া, কলাগাছিয়া, বাটানেশ্বর, ডিংগি মারি, আরফাঙ্গাসিয়া, মান্দার বাড়িয়া,এই সমস্ত এলাকা থেকে বেশি অংশ হরিণ শিকার হয়ে থাকে।
এদিকে এই প্রতিবেদক ধারাবাহিকভাবে সুন্দরবন হরিণ শিকারের বিষয় নিয়মিত পত্রিকায় লেখালেখি করা অবস্থায় ৮ই জানুয়ারি পশ্চিম সুন্দরবনের কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেনের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুন্দর বনের আড়ের
দুনিয়া ,স্থান থেকে ১৬ কেজি হরিণের টাটকা মাংস একটি মিলিত হলেন ও ৪০৮০ফুট হরিণ শিকারের দড়ি জব্দ করেছে এবং এ ব্যাপারে একটি পি ও আর বনমালা দায়ের করেছে , এ ব্যাপারে কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন বলেন হরিণ শিকারের দড়িসহ যে মালামাল জব্দ হয়েছে তাতে মনে হয়েছে একটি শক্তিশালী হরিণ শিকারি চক্র সুন্দরবনে এই কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে এর সাথে লোকালয়ের প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছে । তিনি আরো বলেন বিশাল এই বনবিভাগের জন্য বনরক্ষীদের সংখ্যা খুবই কম সে কারণে আমরা যেদিকে পাহারায় যাই অন্য দিক থেকে শিকারীরা হরিণ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে তারপরও আমরা রাত দিন নিরলস ভাবে হরিণ শিকার প্রতিরোধের কাজ করে যাচ্ছি, শুধু সুন্দরবনে পাহারা দিচ্ছে না লোকালয়ো শিকারীদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য আমাদের সোর্স নিয়মিত কাজ করছে, তাছাড়া আমরা হরিণ শিকার বন্ধের জন্য বিভিন্ন এলাকায় জন সচেতনামূলক মিটিং সেমিনার চালিয়ে যাচ্ছি তারপরও রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধের জন্য শুধু বন বিভাগের একার দ্বারা হরিণ শিকার রোধ করা সম্ভব নয় এলাকার সচেতন মহল সকলকে এই অপরাধের বিরুদ্ধে ছর্চার হতে হবে তা না হলে অচিরেই সুন্দরবনের হরিণ নিধন হয়ে যাবে
সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাদির বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। যে পরিমাণ হরিণের মাংস ও চামড়া আটক হয়, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়।
মাঝে-মধ্যে দুই একটি অভিযানে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা উদ্ধার হলেও মূল চোরা শিকারি ও পাচারকারীরা আটক হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হরিণের মাংস বহনকারীরাই ধরা পড়ে না। আর যারা আটক হয়, তারা দুর্বল আইনের কারণে কয়েক দিন পর জেল থেকে ফিরে একই কাজে লিপ্ত হয়। খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বনের জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন এসেছে। সুন্দরবনে গেলে এখন এমন হরিণ দেখতে পাবেন, যা আগে ছিল না। হরিণের সঙ্গে বাঘও দেখতে পাচ্ছেন সুন্দরবন দর্শনার্থীরা।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বন বিভাগের নিয়মিত টহল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বন বিভাগের নিয়মিত টহল এবং বনে দস্যু বাড়ার পাশাপাশি রাসমেলা বন্ধ হওয়ার কারণে হরিণ শিকার আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
বনে সারা বছরই দস্যুরা এবং বছরের শেষের দিকে দুবলারচরে রাসমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আসে। এই সময় বিপুল পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়। অল্প লোকবল দিয়ে এত মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।