সিরাজুল ইসলাম (শ্যামনগর) সাতক্ষীরা : সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী স্টেশনের আওতাধীন মীরগাং টহল ফাঁড়ির বনকর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা চালিয়েছে যুবলীগ ছেড়ে যুবদলে আসা আনিছুরসহ তার লোকজন।
আনিছুরের নেতৃত্বে গত সপ্তাহের সোমবার রাত ৯টার দিকে ফাঁড়িতে ফেরার পথে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর বাজার সংলগ্ন পাউবো’র বাঁধের উপর হামলা করে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। এসময় মীরগাং টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনকর্মীরা ভিন্ন পথে অপর একটি নৌযান নিয়ে চুনকুড়ি টহল ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয় বলে জানান। হামলার ঘটনায় জড়িতরা স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। একদিন আগে সুন্দরবনের মধ্য থেকে জবাইকৃত হরিণ উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ নব্য যুবদলের আনিছুর শিকারীদের পক্ষ নিয়ে তারা ঐ হামলার চেষ্টা চালায় বলে দাবি বনরক্ষীদের।
মীরগাং টহল ফাঁড়ির ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান, সোমবার সকালে তারা সুন্দরবন থেকে একটি জবাইকৃত হরিণ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে উদ্ধারকৃত হরিণ জমা দিতে সাতক্ষীরা আদালতে যায়। সারাদিনের কার্যক্রম শেষে রাত ৯টার দিকে অফিসে ফেরার পথে ১৬/১৭জন যুবক তাদের উপর চড়াও হয়। এসময় তারা চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির ওসির সহায়তা নিয়ে ভিন্ন পথে পালিয়ে জীবনে রক্ষা পান।
গোলাম কিবরিয়া আরও জানান, উদ্ধারকৃত হরিণ নিয়ে সাতক্ষীরা যাওয়ার পর একদল যুবক আনিছুরের নেতৃত্বে বনকর্মীদের সহায়ক সংগঠন সিপিজি দলের সদস্য পরিমল মন্ডলের বড় ভেটখালী গ্রামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এসময় আনিছুর, সাহেব আলী, আব্দুর রহিমসহ ১০/১২জন পরিমলের স্ত্রী-সন্তানদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি দেয়। তিনি দাবি করেন উদ্ধারকৃত হরিণ নিয়ে সাহেব আলী ও আবিয়ারকে পালাতে দেখেছিলেন। যে কারণে হরিণ উদ্ধারের পর আসামী হওয়ার ভয় থেকে তারা বনকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হামলার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছন বলেও দাবি করেন।
স্থানীয় গ্রামবাসী আবুল খায়ের জানান, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাবের মোড়লের ভাগ্নে নব্য বিএনপি কর্মী আনিছুর রহমান। এছাড়া যুবদল কর্মী সাহেব আলী ও আবিয়ারসহ চুনকুড়ি ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী আব্দুর রহিম নিজেদের কর্মী সমর্থকদের জড়ো করেছিলেন হামলার জন্য।
আবুল হোসেনসহ মীরগাং গ্রামের কয়েকজনের দাবি সাত/আট দিন আগে চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির সদস্যরা
বন থেকে হরিণ শিকারের জন্য পেতে রাখা শতাধিক ফাঁদ উদ্ধার করেন। সে ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চিহ্নিত হরিণ শিকারী যুবলীগ নেতা আনিছুর ও তার লোকজন দু’দিন আগে বনবিভাগকে ফাঁদ উদ্ধারে সহায়তাকারী ছোট নামের এক শ্রমিককে বেপরোয়া মারধর করে। তাছাড়াও কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন আওতাধীন ট্যাংরাখালী টহল ফাড়ি গত কয়েক দিন আগে মিরগাং এলাকায় ফ্রিজকৃত মাংস মাথা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ফরেস্টসহ সিপিজি সদস্যদের জিম্মি করে রাখে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার হাবিবুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা থেকে ফেরার আগেই হরিণ উদ্ধারের সাথে জড়িতদের উপর হামলার বিষয়ে তারা হুমকি পেয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বিষয়টি তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করে একটি সাধারণ ডায়েরী করে আসার পরার্মশ দেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে সহকর্মীরা ক্লান্ত থাকার কারণে পরবর্তী দিনে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারই জের ধরে গতকাল রবিবার চুনকুড়ি ফরেস্ট ওসি সজল কুমারের উপরে একই হামলার ঘটনা ঘটে। সজল কুমার জানান, আমার উপরে হামলার পরে থানায় জিডি হয়েছে। জিডি নং ৮৭, তারিখ ০২-০২-২০২৫।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের প্রধান ও স্থানীয় বিএনপি কর্মী আনিছুর রহমান জানান, তিনি সুন্দরবনে যাতায়াত করেন না। তারপরও তাকে জড়িয়ে বনকর্মীরা মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ায় তিনি লোকজন নিয়ে তাদের সাথে শোনাবোঝার চেষ্টা করেছিলেন। পরিমলের বাড়িতে তথ্য নেওয়ার জন্য যাওয়া হলেও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।