মোঃ এজাজ আলী : সুন্দরবনে পাতামরা রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলপাতা। এতে অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মণ পাতা পচে যাচ্ছে। এতে গোল গাছের নতুন অঙ্কুরোদগম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, যেসব স্থানে গোলপাতার কূপ রয়েছে সেসব স্থানে গোল গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। এক জায়গায় অধিক ঘন বন হওয়ার কারণে এসব গাছের পাতার এমন অবস্থা। কোনো কোনো গাছে মাইজ পাতা (মাঝখানের শিশু পাতা) বাদে সব পাতাই নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বাওয়ালিরা বলছেন, পাতা না কাটার কারণেই নষ্ট হচ্ছে। এতে গাছের ফল প্রদানের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এক সময় এসব কূপ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। বাওয়ালি কওছার হাওলাদার বলেন, আগে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবীরা সারা বছর কিছু না কিছু আয় করতে পারতেন। এখন সেই সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে শিকারির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ হরিণ শিকারি ধরা পড়েছে অতীতে তত ছিল না।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বনজীবী আফছার মোড়ল বলেন, এক সময় সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জেই শুধু তিনটি কূপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে একটি কূপ থেকে গোলপাতা কাটা হয়। বাকি কূপগুলোতে গোলপাতার বংশ বিস্তার কমেছে। পাতা মরে যাচ্ছে। গাছ পরিষ্কার না করার কারণে ফল দেয়ার পরিমাণও কমেছে। ফলে এক সময় এসব গাছ মরে যাবে। তখন গাছের অঙ্কুরোদগমও হবে না।
কয়রা সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গোলগাছ নারকেল, খেজুর, তাল ও কলা জাতীয় গাছের মত। ঝোড়া (পরিষ্কার করা) না হলে ফল দেয়ার পরিমাণ কমে যায়। সুন্দরবনে গোলগাছের ক্ষেত্রটাও একই রকমে। উপকূলের মানুষের মধ্যে গোলপাতার ব্যবহার কমছে। পাতার জোগান না থাকায় মানুষ টিনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। অন্য দিকে এক সময় বারো মাসই গোলপাতা আহরণ করা যেত। তখন কিন্তু গোলগাছ বাড়ত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এসব কূপ নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের তদারকি বাড়লে বাওয়ালিরা গোল গাছের শুধুই পাতাই কাটবে না সাথে সাথে গাছ পরিষ্কার করে দেবে। তখন গাছের পাতা উৎপাদনের সক্ষমতাও বাড়বে।
সুন্দরবন উপকূলে একাধিকর বনজীবী ও বাওয়ালীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, এক সময় সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের আড়ু শিবসা, শিবসা ও ভদ্রা এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের সাতক্ষীরা কূপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে তিনটি স্থানই অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তখন প্রায় এক হাজার বাওয়ালি গোলপাতা আহরণ করতেন। এখন তা কমে আড়াই শ’তে নেমেছে। বর্তমানে একটি কূপ থেকে গোলপাতা কাটা হয়। বাকি কূপগুলোতে গোলপাতার বংশ বিস্তার কমেছে। পাতা মরে যাচ্ছে। গাছ পরিষ্কার না করার কারণে ফল দেওয়ার পরিমাণও কমেছে। ফলে একসময় এসব গাছ মরে যাবে। তখন গাছের অঙ্কুরোদগমও হবে না। এদিকে উপকূলের মানুষের মধ্যে গোলপাতার ব্যবহার কমছে। মানুষ টিনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতেও গোল পাতা আগের চাহিদা হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, কিছু গোলপাতা ঝড়ের কারণে বা অন্য কারণে নষ্ট হতে পারে। পাতা কাটলে পাতা বাড়ে এ কথা ঠিক তবে এখন গোলপাতার চাহিদা বাইরে কম। এক সময় ১০ লাখ টন পাতা আহরণ করা হতো। এখন তা কমে দুই লাখ টনে নেমেছে। যে কারণে অনুমতিও কম দেয়া হয়। তিনি বলেন, সুন্দরবনের কোনো গাছ মানুষ লাগায়নি। ফলে এ বনের গাছও নিজস্ব নিয়মেই তার বিস্তার বৃদ্ধি করবে।