সর্বশেষ গণনায় বাঘের সংখ্যা ১২৫টি
শেখ হাসান আল মাহমুদ, শরণখোলা(বাগেরহাট) : সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় আবারও একসাথে তিনটি বাঘ দেখতে পেয়েছেন পর্যটকরা। প্রায়শই একসাথে একাধিক বাঘ নজরে পড়ছে পর্যটকদের। গত রোববার (১৯ জানুয়ারী) দুপুরে কটকা অভয়ারণ্যের বেতমোড় এলাকার নদীর পাশে এক সাথে তিনটি বাঘের সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করেন পর্যটকরা। সর্বশেষ বাঘ গণনায় সুন্দরবনে ১২৫টি বাঘের সন্ধান মিলেছে। এরমধ্যে মোট সংখ্যার ৫৯% শতাংশ বাঘ বাগেরহাট জেলার সুন্দরবনে রয়েছে। এবারের গণনায় ২১টি বাচ্চা বাঘের ছবি পাওয়া যায়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯১৮ সালে বাঘ গণনার পাঁচ বছর পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে পুনরায় সুন্দরবনে বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রীডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন বেঁধে রাখা শেষে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বাঘ গণনার মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ করা হয়। ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘের ছবি পরীক্ষা করে ২০২৩-২০২৪ সালের গণনায় সুন্দরবনে ১২৫টি বাঘ রয়েছে বলে বনবিভাগ গত ৮ অক্টোবর গণনার ফলাফল ঘোষণা করে জানান। এবারের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে মা বাঘের সাথে ২১ টি বাচ্চা বাঘের ছবি ধরা পড়েছে। বাচ্চা বাঘের মৃত্যুর হার বেশী বলে বাচ্চা বাঘ গণনায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি।
সুন্দরবনে পর্যটকবাহী লঞ্চ এম,ভি আলাস্কা এর খুলনার পর্যটক গাইড মোঃ আলামিন মুঠোফোনে বলেন, রবিবার দুপুরে তাদের লঞ্চ কটকার বেতমোড় খালের কাছে আসার পরই একই জায়গায় তিনটি বাঘের উপস্থিতি দেখতে পান লঞ্চে থাকা পর্যটকরা। প্রথমে তারা বাঘের দৃশ্য ধারণ করেন । এক সাথে থাকা তিনটি বাঘ দেখার অসাধারণ মুহুর্ত প্রত্যক্ষ করেন তারা। বাঘ তিনটির মধ্যে দুইটি পুরুষ ও একটি মাদী বাঘ। সুন্দরবনের কটকা অফিস পাড় থেকে দুটি বাঘ এবং বেতমোর নদী পেড়িয়ে একটি বাঘ এসে একত্রিত হয়েছিলো। কিন্তু বেতমোড় এলাকা থেকে আসা বাঘটিকে অপর দুটি বাঘ আক্রমন করে প্রথমে নদীতে ফেলে দেয়। নদীতে পড়ে যাওয়া বাঘটি অনেকক্ষন ধরে পানিতে ভাসতে ছিলো। পরে সাতরে উঠে বাঘ বনের মধ্যে চলে যায়। এসব মুহুর্তের দৃশ্য ধারণ করেন তিনি।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মোঃ সোয়েবুর রহমান সুমন মুঠোফোনে জানান, কয়েকদিন আগে কটকার বাদামতলা এলাকায় বনরক্ষীদের টহলদান কালে তিনি নিজেই এক সাথে চারটি বাঘ দেখতে পেয়েছেন। এমভি আলাস্কা নামের পর্যটকবাহী লঞ্চের ভ্রমনরত পর্যটকরা রোববার বনের বেতমোড় এলাকায় একসাথে তিনটি বাঘ দেখেছেন বলে তাদের জানিয়েছেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চোরা শিকারীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বাঘ তার সুস্থ আবাসস্থল ফিরে পাওয়ায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির আঙ্গিনায় এক সাথে তিনটি বাঘ ২০ ঘন্টা ধরে অবস্থান নিয়েছিলো।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টোয়াস) এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিট বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকরা সুন্দরবনে কয়েকবার এক সাথে একাধিক বাঘ দেখেছেন। এক সাথে তিনটি বাঘ দেখা স্বাভাবিক ঘটনা বলে তিনি মনে করেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) দীপন চন্দ্র দাস বলেন, সুন্দরবনে আগের চেয়ে বাঘ বেড়েছে। জেলেরা সুন্দরবনে অনেক জায়গায় মা বাঘের সাথে বাচ্চা বাঘ দেখতে পেয়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করীম বলেন,বাগেরহাটের সুন্দরবনে বাঘের মুল খাবার হরিণসহ অন্যান্য খাবার ও বাঘের আবাসস্থল তাদের অনুকুলে থাকায় এখানে বাঘ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জন্মভূমিকে বলেন, সুন্দরবনে একসাথে তিনটি বাঘ দেখা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আগে পর্যটকদের কাছে মোবাইল ক্যামেরা ছিলোনা তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকায় বাঘ দেখার প্রচার তেমন হতোনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ১২৫টি বাঘ পাওয়া যায়। এরমধ্যে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা রেঞ্জ ও চাঁদপাই এলাকার সুন্দরবনে ৫০টি বাঘ পাওয়া যায়। এবারের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে মা বাঘের সাথে ২১ টি বাচ্চা বাঘের ছবি ধরা পড়েছে বলে সিএফ জানিয়েছেন।