সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সিডর ঘূর্ণিঝড়ের ৩ দিকেই সুন্দরবন জুড়ে ছিল। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, সুন্দরবনের কারণে তার অবস্থানের পরিবর্তন কমে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিজস্ব শক্তিও কমে আসে। ফলে বাংলাদেশ বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা সিডরে প্রাণ হারান ৩৪০৬ জন। আহত হন প্রায় আধলাখ মানুষ। এছাড়া, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ফসল নষ্টসহ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় ৮৯ লাখ মানুষ।
পরে আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় জানানো হয়, সিডরের সময় সুন্দরবন না থাকলে অন্তত ৪৮৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো।
এছাড়া, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৩৯ জন। জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিলেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। সেবারও সুন্দরবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
অথচ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সুন্দরবনের অস্তিত্ব প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট নানা দুর্বিপাকে বিপন্ন। তার উপর এখন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে বিশাল এক কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ প্রকল্প। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষসহ বিদেশি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, ব্যক্তি ও সংগঠনের আপত্তিস্বত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্প থেকে সরে আসছে না সরকার।
মূলত কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী বলে সাধারণত কোন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জনবসতির ১৫-২০ কিমি এর মধ্যে এ ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় না। এসব কিছু জানার পরেও সেখানে তাপ বিদুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে।
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরব এই সুন্দরবন। এই বনের কারণেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বারবার রক্ষা পেয়ে থাকে। অথচ এই সুন্দরবনকে আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করছে। এসব কুচক্রী মহল সুন্দরবনের বৃক্ষ নিধনে নেমে পড়েছে।
যে সুন্দরী গাছের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত, সেই সুন্দরী গাছও আজ ধ্বংসের পথে। এক সময় সুন্দরবনে অনেক বাঘ ছিল। এখন হাতেগোনা কয়েকটি বাঘের সন্ধান মিলতে পারে। মাঝেমধ্যে বাঘের অকালমৃত্যুর খবর আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কেউ কেউ বাঘ শিকার করছে বাঘের চামড়া পাচার করে অর্থ উপার্জন করছে। শুধু তাই নয় এরা বাঘের ছোট বাচ্চাদেরও রেহাই দিচ্ছে না।
সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে হরিণ শিকার করছে। একসময় সুন্দরবনে এমন ভীতিকর পরিবেশ ছিল যে, যদি কেউ সুন্দরবনে প্রবেশ করত গাছপালার ভিড়ে চারদিক অন্ধকার দেখাত ও প্রাণীদের পায়ের আওয়াজে শরীরে শিহরণ সৃষ্টি হতো। এখন সুন্দরবনে প্রবেশ করলে প্রাণিকুলের সন্ধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু তাই নয় সুন্দরবনে নদী দিয়ে প্রবেশ করা তেলবাহী জাহাজ ডুবে গিয়ে নদীর পানির সঙ্গে তেল মিশে মৎস্য প্রজাতির বিচরণক্ষেত্রে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দরবনের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে পারবে না। সুন্দরবন যে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, তা তারা বিশ্বাসই করতে পারবে না। তাই সুন্দরবন রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কঠোর আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সুন্দরবনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে । ভৌগলিক কারণে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর মার্চ এপ্রিল মে এই ছয় মাস প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলার ৭৩ টি উপজেলায়। প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় উপকূলে ধেয়ে আসলেও বিশ্বের ম্যানগ্রো ফরেস্ট সুন্দরবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কম হয়ে থাকে । যদিও ঘূর্ণিঝড় হয়ে যায় মানুষের জানমাল গবাদি পশু গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কম হয়ে থাকে
তার একমাত্র কারণ আমাদের দক্ষিনে সুন্দরবন তাই বলা হয়েছে সুন্দরবন বাছাই বাংলাদেশকে কিন্তু সুন্দরবনকে বাঁচাবে কে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আপনার আমার সকলকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে সুন্দরবনের গাছপালা জীবজন্তু বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপামর সকলের দায়িত্ব সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ এই সম্পদ বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। বেশ কিছু সুন্দরবনের দায়িত্ব রত অসাধু কর্মকর্তারা নিজেদের আখের গোছাতে সুন্দরবনকে ধ ভবাংশ করার দ্বার প্রান্তে নিয়ে গেছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার বাংলাদেশের সব সেক্টরে সংস্কার করছে সুন্দরবনেও সংস্কার করা।অতি জরুরী এই সমস্ত সুন্দরবন ধ্বংসকারী বনরক্ষীদের চাকরি সুতো করে নতুন করে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছে সুদিমহল। এ ব্যাপারে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণার ব্যারিস্টার হুমায়ূন আহমেদ বলেন সুন্দরবনকে না বাঁচাতে পারলে বাংলাদেশ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সে কারণে সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে প্রয়োজনে সংস্কার আইন পরিবর্তন করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের সুন্দরবন পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি সর্ববৃহৎ পর্যটক ও সৌন্দর্য বলে মনে করেন । ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃ ক বাংলাদেশের সুন্দরবনকে স্বীকৃতি দিয়েছে সে কারণে আমাদের এই গৌরব যে কোন মূল্যে টিকিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে সেজন্য সরকারকে এক্ষুনি কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সুন্দরবনে সেপারেট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। পারলে আলাদা সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রণালয় করতে হবে । সুন্দরবনের তৈরি করা ব্রিটিশের আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন তৈরি করতে হবে যে সমস্ত আইন তৈরি করতে হবে শে সমস্ত আইনে যেন সুন্দরবনের কোন অপরাধী শাস্তির বাইরে না যায় তাই সে বনজীবী হোক আর বন রক্ষী।হোক সবার জন্য পৃথক পৃথক আইন তৈরি করতে হবে শুধু আইন তৈরি করলে হবে না আইন প্রেরকও করতে হবে। বাংলাদেশের দক্ষিণে যদি সুন্দরবন না থাকতো এতদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেত যাহা পুষিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়তো প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দিলে উপকূলীয় মানুষ সুন্দরবন থামনে থাকলেও নিরাপদ আশ্রয় চলে যান পরে শোনা যায় সুন্দরবনের কারণে উপকূলীয় মানুষের ও জান মালের আঘাত আনতে পারে নাই। তবুও উপকূলীয় মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে আতঙ্কে কাটে তাদের জীবন। দক্ষিণের সুন্দরবন থাকায় বাংলাদেশের উপকূলীয় প্রায় 40 লাখ মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির জীবনের ঝুঁকি কম রয়েছে।
সুন্দরবন বাঁচালো বাংলাদেশকে, সুন্দরবনকে বাঁচাবে কে?
Leave a comment